১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৪০:২৪ অপরাহ্ন


ক্যানসার অক্ষরান্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন
সোহেল জুলফিকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৪-০২-২৪ ০১:৫০:৩০
ক্যানসার অক্ষরান্ত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন


প্রায় ১৭ বছর সুস্থ থাকার পর, গত বছর শেষে দিকে ফের মরণব্যাধি ক্যানসার হানা দিয়েছে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের দেহে। অবস্থার খানিক অবনতি হওয়ায় চলতি মাসের (ফেব্রুয়ারি) প্রথম সপ্তাহে কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পীকে জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে সিঙ্গাপুর, ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারে।


২০০৭ সালে প্রথম ওরাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন সাবিনা ইয়াসমিন। তখন দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে সবার উদ্যোগে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে বেশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি এ কণ্ঠশিল্পী। এরপর থেকে নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে ভালোই ছিলেন কোটি মানুষের মনে গেঁথে থাকা কোকিলকণ্ঠী সাবিনা ইয়াসমিন।

তার পারিবারিক সূত্র জানা গেছে, গত বছরের শেষ দিকে কিছু জটিলতা তৈরি হয় সাবিনা ইয়াসমিনের শরীরে। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায়, শিল্পীর মুখ-গহ্বরে ফের ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। অবশেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নিয়ে যাওয়া হলো সিঙ্গাপুরে।


এরইমধ্যে তার মুখে একটি সার্জারি হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্রুতই তাকে আবার নিতে হবে রেডিওথেরাপি। কিংবদন্তি এ শিল্পীর পক্ষ থেকে দোয়া চেয়েছেন তার পরিবার।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তার কোটি ভক্ত শ্রোতাদের জন্য গান গাইছেন সাবিনা ইয়াসমিন। তার মতো মিষ্টি কণ্ঠ এই বাংলায় দ্বিতীয়টি এখনও আসেনি, এমনটাই বলেন সংগীত বিশ্লেষকরা।


বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গান গাওয়ার পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গান কণ্ঠে তুলে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। অর্জন করেছেন ১৪টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলার সংগীত শাখায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।


সাবিনা শৈশব থেকে গানের তালিম নেওয়া শুরু করেন। তিনি সাত বছর বয়সে প্রথম মঞ্চানুষ্ঠানে অংশ নেন এবং খেলাঘর নামে একটি বেতার অনুষ্ঠানে ছোটদের গান করতেন। ১৯৬২ সালে নতুন সুর চলচ্চিত্রে রবীন ঘোষের সুরে ছোটদের গানে অংশ নেন। চলচ্চিত্রে পূর্ণ নেপথ্য সংগীতশিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। ১৯৭২ সালে ‘অবুঝ মন’ চলচ্চিত্রের ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ গানে কণ্ঠ দিয়ে তিনি প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।


এ শিল্পীর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- সব সখীরে পার করিতে, এই পৃথিবীর পরে, মন যদি ভেঙে যায়, ও আমার রসিয়া বন্ধুরে, জীবন মানেই যন্ত্রণা, জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো, সব ক’টা জানালা খুলে দাও না, ও আমার বাংলা মা, মাঝি নাও ছাড়িয়া দে, সুন্দর সুবর্ণ, একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার প্রভৃতি।

সাবিনা ইয়াসমিন শেষ প্লেব্যাক করেছেন কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন।