মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৪৪৫ হিজরির পবিত্র ঈদুল ফিতর ১১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। মুমিন মুসলমান প্রতি বছরে দুটি ঈদ উদযাপন করে থাকেন। যে কারণে অনেকেই ঈদের নামাজের নিয়ম ভুলে যান। মুসলিম উম্মাহর জন্য ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। ঈদের দিন যথাযথভাবে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য নিয়ম ও প্রস্তুতির বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো-
ঈদের নামাজ কোথায় পড়বেন:
ছাদবিহীন খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ পড়া সুন্নাত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উন্মুক্ত স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। তবে যদি ঈদের নামাজ পড়ার জন্য খোলা স্থান না থাকে তবে মসজিদ কিংবা ছাউনি বিশিষ্ট স্থানেও নামাজ পড়া যাবে। আবার প্রকৃতিক দুর্যোগেও বৃষ্টি প্রতিরোধক ছাউনিযুক্ত স্থানে ঈদের নামাজ পড়া যাবে।
ঈদের নামাজের শর্ত?
ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। উন্মুক্ত স্থান, মসজিদ, ছাউনিযুক্ত জায়গা বা বাসা-বাড়ি; যেখানেই হোক অবশ্যই জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। শুধু আজান ও ইকামত ছাড়া জুমার নামাজের জন্য যেসব শর্ত প্রয়োজন ঈদের নামাজের জন্যও সেব শর্ত প্রয়োজন।
জামাত ছাড়া যেমন ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না। তেমনি বাসা-বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় করতে হলেও অবশ্যই জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।
ঈদের নামাজের আজান ও ইকামত নেই। তবে জুমার নামাজের মতোই উচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।
ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার পর দুইটি খুতবা দিতে হবে। যেভাবে জুমার নামাজের আগে দুইটি খুতবা দেওয়া হয়।
জুমার সঙ্গে ঈদের নামাজের পার্থক্য:
১. ঈদের নামাজের আজান ইকামত নেই।
২. ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ৬ তাকবির দিতে হবে। হাদিসে ৬ তাকবিরসহ আরও বেশি তাকবিরের কথাও উল্লেখ আছে।
৩. ঈদের নামাজের পরে দুইটি খুতবা দিতে হবে। আর জুমার নামাজের ক্ষেত্রে আগে দুইটি খুতবা দিতে হয়।
ঈদের নামাজের নিয়ত:
ঈদের দুই রাকাআত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- 'আল্লাহু আকবার'।
ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম:
১. ঈমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত বাঁধা।
২. তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়া-
'সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
৩. এরপর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।
৪. এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা।
৫. প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।
৬. তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
৭. আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া
৮. সুরা ফাতেহা পড়া
৯. সুরা মিলানো। এরপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত:
১. বিসমিল্লাহ পড়া
২. সুরা ফাতেহা পড়া
৩. সুরা মিলানো।
৪. সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া।
৫. প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।
৬. তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নিতে হয়।
৭. এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৮. সেজদা আদায় করে
৯. বৈঠকে বসা; তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
১০. নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়া।
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
১১. নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুইটি খুতবা দেওয়া।
ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে। অবশ্য অনেকেই খুতবা না দেওয়ার ব্যাপারে শিথিলতার কথা বলেছেন। খুতবা না দিলেও ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন।
অতিরিক্ত তাকবির:
অতিরিক্ত তাকবিরের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাজহাবসহ অনেকেই প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমাসহ ৭ তাকবির আর দ্বিতীয় রাকাআতে ৫ তাকবিরে দিয়ে থাকেন। যদি কেউ অতিরিক্ত ৬ তাকবির দেয় কিংবা অতিরিক্ত এগারো তাকবির দেয় তাতে নামাজের অসুবিধা হবে না বরং নামাজ হয়ে যাবে।
ঈদের জামাতের শর্ত:
ঈদের নামাজের জন্য জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার শর্ত হলো- ইমাম ছাড়া ন্যূনতম তিনজন মুসল্লি হতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে বাসা-বাড়িতে পরিবার নিয়ে ঈদের নামাজের জামাত আদায় করা যাবে।