সকালে তীব্র যানজট, দুপুরে
স্বস্তি, বিকেলে ভোগান্তি, সন্ধ্যায় নির্জনতা—মোটাদাগে
এই ছিল গতকাল বৃহস্পতিবারের রাজধানীর পরিস্থিতি।
গতকাল বিকেল সোয়া চারটার
দিকে কথা হয় মতিঝিলের সরকারি একটি অফিসের কর্মকর্তা এখলাছ হোসেনের সঙ্গে। মহাখালী এলাকায়
যানজটে আটকা পড়ে মুঠোফোনে তিনি বলছিলেন, ‘মতিঝিল থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত আসতে যানজটে না পড়লেও
মহাখালীর কাছাকাছি এসে বাস থেমে আছে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। সামনে-পেছনে ব্যাপক যানজট।’
এখলাছের মতো রাজধানীর অফিসফেরত
অনেককেই বিকেলে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আরেকজন শহিদুল ইসলাম।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আসাদগেটের দিকে রওনা দিয়েছিলেন
তিনি। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মুঠোফোনে শহিদুল ইসলাম বলেন, শাহবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল
মোড় পর্যন্ত ঠিকমতো এলেও এরপর আর গাড়ি এগোচ্ছে না। এমন যানজট ছিল সকালেও। অফিসে আসতে
ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চাকুরে নাগরিকদের।
তবে গতকাল দুপুরের দিকে
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। যেহেতু
বিকেল পাঁচটা থেকে কারফিউ বলবৎ হচ্ছে, তাই বেলা তিনটায় অফিস শেষ করে দ্রুত ঘরে ফিরতে
বিকেলে এবং সকালে অফিসমুখী মানুষের চাপে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হতে
দেখা গেছে।
গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল
৪টা পর্যন্ত অফিসার্স ক্লাবের সামনে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট
শেখ ইমরান হোসাইন। তিনি বলেন, মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আগের চেয়ে সড়কে চাপ কিছুটা বেড়েছে।
গত বুধবার থেকে অফিস খুললেও
কর্মঘণ্টা কমিয়ে বেলা ১১টা থেকে ৩টা করা হয়েছে। কারফিউ অনেকটা শিথিল করা হলেও পুরোপুরি
প্রত্যাহার করা হয়নি। বিকেল ৫টার পর থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকছে।
ফলে দ্রুত কাজকর্ম লেনদেন চুকিয়ে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরার তাড়া লক্ষ করা যাচ্ছে। এ
কারণে সকাল-বিকেল যানজট বাড়ছে। আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাটে বেচাকেনা কমে গেছে।
সব মিলিয়েই শহরবাসীর জীবনযাপনে স্বাভাবিক ছন্দ ও স্বস্তি পুরোপুরি ফিরে আসেনি।
গতকাল কয়েকজন ব্যবসায়ীর
সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেচাকেনা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ ভাগ হয়েছে। কিছু
কিছু ক্ষেত্রে আরও কম। ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে একটি চেইনশপের ব্যবস্থাপক মারুফ হাসান
জানালেন যদিও বিকেল পাঁচটা থেকে কারফিউ শুরু হয়, কিন্তু তাঁরা চারটায় লেনদেন বন্ধ করে
দিচ্ছেন। সপ্তাহখানেক ঘরে থাকার পর বুধবার কারফিউ শিথিল করে দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণা
আসে। সেদিন লোকসমাগম বেশি হয়েছিল। সে তুলনায় গতকাল স্বাভাবিকের তুলনায় ২৫ ভাগ বিক্রি
হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
কোনো কোনো দোকানে বেচাকেনাই
হচ্ছে না বা হলেও নামমাত্র। ঢাকা কলেজের সামনের তৈরি পোশাকের দোকানগুলো বছরজুড়ে সকাল–সন্ধ্যা ক্রেতাসমাগম আর বেচাকেনায় জমজমাট থাকে। গতকাল দেখা গেল সারি
সারি দোকান খুলে ক্রেতার আশায় বসে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতার সংখ্যা হাতে গোনা। এখানে
নাহার ভবনের ইউনিক ফ্যাশনের ব্যবস্থাপক মো. বাবু জানালেন বুধবার দোকান খুলে সারা দিনে
কোনো বিক্রিই হয়নি। গতকাল বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুটি শার্ট বিক্রি করেছেন ৯০০ টাকায়।
অথচ এই দোকানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
প্রায় এক সপ্তাহ পর গত
বুধবার ব্যাংকের লেনদেন শুরু হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। ব্যাংক এশিয়ার নিউ এলিফ্যান্ট
রোড শাখার এভিপি ও ব্যবস্থাপক নাইমুর রহমান জানালেন, বুধবারের চেয়ে গতকাল লেনদেন কিছুটা
বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ।
এদিকে অফিস সময় সংক্ষেপ
করা হলেও স্বাভাবিকভাবেই কাজ হচ্ছে বলে জানালেন ওলিউর রহমান। শিক্ষা ভবন থেকে কাজ শেষ
করে বেলা তিনটার দিকে তোপখানা রোডের মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। রাজশাহী
সরকারি কলেজের শিক্ষক ওলিউর রহমানের বাড়ি রাজশাহী শহরের ডিঙ্গাডোবায়। বুধবার রাতের
বাসে রওনা দিয়ে সকালে ঢাকায় এসেছেন। শিক্ষা ভবনে তাঁর কাজ ছিল। তিনি জানালেন, অফিসে
তেমন লোকজনের ভিড় ছিল না। অল্প সময়েই তাঁর কাজ শেষ হয়েছে।
রাজধানীতে দিনের বেলায়
কর্মব্যস্ত পরিবেশে থাকলেও বিকেল পাঁচটার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে পরিবেশ। সময় বাড়ার
সঙ্গে সঙ্গে সড়কগুলো ফাঁকা হয়ে যায় দ্রুত। হাসপাতাল, ওষুধের দোকান ও পাড়া–মহল্লার ভেতরের কিছু মুদিখানা ছাড়া প্রায় সব দোকানপাট ও বড় বিপণিবিতানগুলো
বন্ধ হয়ে যায়। নেমে আসছে সুনসান নিরিবিলি পরিবেশ। এই সন্ধ্যার চিরচেনা যানজটে আকীর্ণ
ঢাকা শহরে এই সন্ধ্যাকালীন অচেনা নিরিবিলি নির্জনতাই বলে দেয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতি
ফেরেনি জনজীবনে।