ইতিহাসই বটে! প্রতিপক্ষের
মাটিতে তাদেরই টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের কৃতিত্ব বাংলাদেশ এর আগেও দেখিয়েছে। তবে প্রতিবেশী
এশিয়ান পরাশক্তিদের যে কারো মাঠে এই কীর্তি ছিল না আর একটাও। সে ইতিহাস এসে বাংলাদেশের
হাতে ধরা দিল আজ।
প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয়
ও শেষ টেস্টেও পাকিস্তানকে হারাল ৬ উইকেটের ব্যবধানে। তাতেই ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানকে
তাদেরই মাটিতে হোয়াইটওয়াশের তেঁতো স্বাদ দিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের লক্ষ্যটা ছিল
১৮৫ রানের। চতুর্থ ইনিংসে, পঞ্চম দিনের উইকেটের হিসেবটা মাথায় রাখলে বিষয়টা একটু ‘ট্রিকি’। সঙ্গে যখন থাকে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৬ রানে
হুড়মুড়িয়ে ৬ ব্যাটারের সাজঘরে ফেরার গল্প, তখন তো সে লক্ষ্যটাকেও দুরূহ বলেই মনে হওয়ার
কথা!
তবে ব্যাটাররা এবার আর
কোনো ভুলচুক করেননি। হ্যাঁ, দারুণ শুরুগুলোকে জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা
মুমিনুল হকরা বড় কিছুতে রূপ দিতে পারেননি, তবে সবাই এগিয়ে এলে ১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া
করতে ব্যক্তিগত বড় রানের প্রয়োজনও পড়ে না তেমন, তাই তাদের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসার ‘অপরাধ’গুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখাই যায়। আর উপলক্ষটা
যখন হয় পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশের, তখন এসব নিয়ে আলাপ টানাও বাহুল্য মনে
হয়।
গতকাল বিকেলে জাকির হাসান
তার দ্বিতীয় স্কোরিং শটেই ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। অভিপ্রায়টা তখনই পরিষ্কার ছিল। অকালে
দিনটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে হাসান মাহমুদ খানিকটা আফসোসও প্রকাশ করেছিলেন,
‘যদি বৃষ্টি না হতো আমরা চেষ্টা করতাম যে আজকের মধ্যে
কীভাবে শেষ করা যায়…’
এরপরই জানিয়েছিলেন, প্রথম
সেশনেই আজ খেলাটা শেষ করার চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। দলীয় ৪২ রানে আজকের দিন শুরু করা
দুই ওপেনার সেটা বুঝিয়েও দিয়েছেন। জাকির ছিলেন তার মতো করেই, ফেরার আগে করেছেন ৪০ রান।
এই ঝোড়ো ইনিংসেই পাকিস্তানের সব পরিকল্পনা জানালা দিয়ে পালিয়েছে, তা বললেও অত্যুক্তি
হবে না বোধ করি।
সঙ্গী সাদমান ইসলামও খোলস
ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন। কিছুটা সফলও হয়েছিলেন, তবে সেটা কুড়িতেই শেষ হয়ে
গেল দিনের দশম ওভারে, তিনি ফিরলেন ২৪ রান করে। পাঁচ ওভারের এদিক ওদিকে দুই ওপেনারকে
খুইয়ে বসায় প্রথম ইনিংসের প্যারানয়া পেয়ে বসা অস্বাভাবিক ছিল না।
তবে সেটাকে বাস্তবে রূপ
নিতে দেননি পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে নিজের ছায়া হয়ে থাকা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত
আর অভিজ্ঞ মুমিনুল হক। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৭ রান তুলেছেন। বাংলাদেশ তাতে
চলে গেছে জয় থেকে ৫৮ রানের দূরত্বে।
শান্তর বিদায়ের পর মুমিনুল
মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেছেন আরও ২৮ রান। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা ডাবল সেঞ্চুরি
জুটির চেয়ে কোনো অংশে কম কিছু আদৌ হবে না। মুমিনুল ৩৪ রানের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি।
তবে তাতে কোনো ক্ষতিও হয়নি বিশেষ। মুশফিক সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ফিরেছেন বাকি
৩২ রান তুলে একেবারে ম্যাচ শেষ করেই। তাতেই ইতিহাসটা গড়েই ফেলে বাংলাদেশ। হোয়াইট ওয়াশ
করে পাকিস্তানকে, তাও আবার তাদেরই মাটিতে।
সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক
শান্তকে স্থানীয় এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরে, ঘরের বাইরে
টেস্ট ক্রিকেটে বিব্রতকর ইতিহাসের কথা। তার জবাবে শান্ত বলেছিলেন, ‘ইতিহাস তো বদলে যেতেই পারে!’ জানিয়েছিলেন এবারের সফরে স্পেশাল কিছু করে দেখানোর
অভিপ্রায়।
তবে দল গত দুই টেস্টে যা
করল, তাতে তা স্পেশাল তো বটেই, সিরিজটা উঠে গেল ইতিহাসের পাতাতেও। অধিনায়ক শান্ত কি
এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতেন?
সংক্ষিপ্ত স্কোর–
পাকিস্তান ২৭৪/১০ (সাইম
৫৮, সালমান ৫৪; মিরাজ ৫/৬১)
বাংলাদেশ ২৬২/১০ (লিটন
১৩৮, মিরাজ ৭৮; শেহজাদ ৬/৯০)
পাকিস্তান ১৭২/১০ (সালমান
৪৭, রিজওয়ান ৪৩; হাসান ৫/৪৩, নাহিদ রানা ৪/৪৪)
বাংলাদেশ ১৮৫/৪ (জাকির
৪০, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ৩৪)
ফলাফল– বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ– বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।