সালমান খান ও লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নাম সাধারণত একসঙ্গে উঠে আসার কথা নয়। অথচ দু’দিন পর পর তাই হচ্ছে। তাও আবার সিনেমা নয়, খুন-খারাপির ঘটনার সূত্রে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সালমান খানের বাসভবন গ্যালক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে ভোররাতে গুলি চালায় কিছু দুষ্কৃতি। একাধিকবার হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলিউডের সুপারস্টারকে। শুধু সালমান নন, তার বাবাকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে ক্রমাগত। অক্টোবরের শুরুতে এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করা হয়। এর পিছনে বিষ্ণোইরা আছে বলে, মত একাংশের।
কিন্তু জানেন কি, কেন সালমান আর লরেন্স বিষ্ণোইয়ের মধ্যে চলছে এই টানাপোড়েন? কী ঘটেছিল তাদের মধ্যে?
এর উত্তর লুকিয়ে আছে ১৯৯৮ সালে। সেই বছরে অক্টোবরে রাজস্থানের যোধপুরে একটি সিনেমার শুটিং করছিলেন সালমান। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সদস্য মহিপাল বিষ্ণোই জানিয়েছেন, ১ অক্টোবর থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে ভোর ২টা নাগাদ কঙ্কানি গ্রামে গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর পাওয়া যায় ২টি মৃত কৃষ্ণসার হরিণ। তারপর থেকে কয়েক দশক ধরে চলা আদালতের চলা মামলা, তদন্ত, অভিযোগে সেই হরিণকে হত্যার দায় চেপেছে সলমন খানের ঘাড়ে।
সেই সিনেমার শুটিংয়ে আরও ছিলেন সইফ আলি খান, টাবু, সোনালি বেন্দ্রেরা। এই মামলায় বাকিরা খালাস পেলেও সালমান খানকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অবশ্য, সালমানের আইনজীবীরা সেই থেকে লড়ে যাচ্ছেন এই নিয়ে। মজার তথ্য হলো, যে দুর্ভাগ্যজনক রাতে কৃষ্ণসার হরিণের কাহিনি ঘটেছিল, তখন লরেন্সের বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর!
তাহলে কেন এখনও চলছে সালমান-লরেন্স যুদ্ধ?
জানা গেছে, বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষভাবে সম্মানিত কৃষ্ণসার হরিণ। কারণ এই সম্প্রদায়ের মূল নীতি হলো বন্যজীবন এবং প্রকৃতির লালনপালন। বিশেষত কৃষ্ণসার হরিণকে তারা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা গুরু জাম্বেশ্বরের প্রতীক হিসেবে দেখে। জানা যায়, বিষ্ণোই মহিলারা অনাথ কৃষ্ণসার হরিণকে বুকের দুধ পর্যন্ত খাওয়ান।
এই পুরো ঘটনাটি লরেন্সকে কতটা গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল, তা জানা যায় ২০১৮ সালে। যখন পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন গ্যাংস্টার যোধপুরেই সালমানের জীবন শেষ করার শপথ নিয়েছিল। এই বিবৃতির তীব্রতা বোঝা যায়, যখন ২০২২ সালে সেলিম তার প্রাতঃভ্রমণের সময় একটি বেঞ্চে হুমকির চিঠি পেয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘তুমহারা মুসেওয়ালা কর দেঙ্গে’।
এর পরে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে একটি ই-মেইলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যাতে সালমান ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরের মাসে গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টেও চলে গুলি।
এখানেই শেষ নয়, গত মে মাসে পানভেলের ফার্মহাউসের কাছে একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে সালমানকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা বানচাল করে পুলিশ। বছর দেড়েক আগে জেল থেকে এক সাক্ষাৎকারে লরেন্স জানিয়েছিলেন, সালমানকে শুধু বিষ্ণোই মন্দিরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। এবং বলা হয়, অভিনেতা যেন জলদিই তা করেন। গত ১৮ অক্টোবর মুম্বাই পুলিশের কাছে নতুন করে হুমকি আসার পর আরও নড়েচড়ে বসেছে সকলে। এমনকী ভাইজান নিজেও কয়েক কোটি দিয়ে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছেন। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও।