১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৪৯:০২ অপরাহ্ন


দেশের প্রথম ৬ লেনের সেতু ‘মধুমতি’
সৈয়দ ইমরুল সামাদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
দেশের প্রথম ৬ লেনের সেতু ‘মধুমতি’ মধুমতি


দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু ‘মধুমতি’। যা চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলো সোমবার (১০ অক্টোবর) থেকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন নড়াইলের লোহাগড়ার কালনা পয়েন্টে নির্মিত এই সেতু। 

এটি চালু হওয়ার ফলে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে দক্ষিণ-পশ্চিমের দূরত্ব কমবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। সেতুর পূর্ব পাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা এবং পশ্চিম পাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের নির্বাচনি জনসভায় সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন তিনি।

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যশোর ও নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে কালনাঘাটে সেতুর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। কারণ পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার কালনাঘাট। 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কালনাঘাটে নির্মিত মূল সেতু ও সংযোগ সড়কের সব কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর অর্ধেক অংশে ল্যাম্পপোস্ট বসানো শেষ। টোল প্লাজার আটটি বুথ বসানো হয়েছে। সেখানে যন্ত্রপাতি বসানোর কাজও সম্পন্ন। গাড়ি চলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত সেতুটি। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। ছয় লেনের সেতুটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক চার দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, পদ্মা সেতু চার লেনের হলেও দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু মধুমতি। পদ্মা সেতুর পাইলক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত। কিন্তু এ সেতুর পাইলক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে। তাই নৌযান চলাচল সমস্যা হবে না, পলি জমবে না এবং নদীর স্রোতও কম বাধাগ্রস্ত হবে। সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এই সেতু চালু হলে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে যশোর হয়ে নড়াইলে যাতায়াতকারী পরিবহনগুলো মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার ও নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া, মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরার দূরত্বও কমে যাবে। এশিয়ান হাইওয়েতে থাকা সেতুটি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, বেনাপোল ও কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকাও রাখবে।

সেতুতে কোন গাড়িত কত টোল

মধুমতি সেতু পারাপারের জন্য বড় ট্রেইলর ৫৬৫, তিন বা ততধিক এক্সসেলবিশিষ্ট ট্রাক ৪৫০, দুই এক্সসেলবিশিষ্ট মাঝারি ট্রাক ২২৫, ছোট ট্রাক ১৭০, কৃষিকাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর ১৩৫, বড় বাসের ক্ষেত্রে ২০৫, মিনিবাস বা কোস্টার ১১৫, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কনভারশন করা জিপ ও রে-কার ৯০, প্রাইভেট কার ৫৫, অটোটেম্পো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ২৫, মোটরসাইকেল ১০ টাকা ও রিকশা, ভ্যান ও বাইসাইকেলের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন