১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৪৯:৫০ অপরাহ্ন


‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে কাঁদলেন ফারুকী
সালেহ খান শাওন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
‘শনিবার বিকেল’ নিয়ে কাঁদলেন ফারুকী


স্ত্রী-অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও একমাত্র সন্তান ইলহামকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে গেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ক্যাঙ্গারুর দেশের নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা ছিলো এবারের লক্ষ্য। সেখান থেকে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) কিছু মুহূর্ত শেয়ার করছেন ভক্তদের সঙ্গেও। তবে এই প্রশান্তিময় আনন্দ সফরেও ফারুকীর চোখে গড়ালো জল! গভীর রাতে স্ত্রী-কন্যাকে আড়াল করেই কাঁদলেন এই নির্মাতা।

না, এ কান্না দুঃখের নয়; সুখের। দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা একতাবদ্ধ হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার আটকে থাকা ছবির জন্য বিবৃতি দিয়েছেন, এই আনন্দেই দূরপরবাসে থেকে চোখ ভিজে উঠেছে ফারুকীর।

গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে ফারুকীর নতুন ছবি ‘শনিবার বিকেল’। কোনোভাবেই ছবিটিকে মুক্তির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা আর অদৃশ্য লড়াইয়ে ডুবে আছেন নির্মাতা।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দেশের ১৩০ জন সংস্কৃতিকর্মী যৌথভাবে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তারা ‘শনিবার বিকেল’র নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। এ বিষয়টি জানতে পেরে আপ্লুত ফারুকী। সিডনি থেকে ফেসবুকের পাতায় লিখেছেন, “এখন আর লুকাতে চাই না। আমি মানুষটা এককীত্বকে মৃত্যুর মতো ভয় পাই। গত তিন বছর প্রচণ্ড অভিমান হয়েছিলো আমার সহযোদ্ধাদের ওপর, বাংলাদেশের ওপর। ‘শনিবার বিকেল’কে কেন্দ্র করে আমার ওপর যে অন্যায় করা হচ্ছিলো, তা কেবল আমাকে এবং আমার বউকেই একা একা বইতে হচ্ছে ভেবে কত রাত যে মনে মনে অভিমানে দেশ ছেড়ে চলে গেছি তার ইয়ত্বা নাই। কত রাত যে ঘুমাতে পারি নাই, হিসাব নাই।”

গত রাতের (১৪ নভেম্বর) ঘটনা জানিয়ে ফারুকী বলেছেন, “কালকে (১৪ নভেম্বর) রাতেও আমি ঘুমাতে পারি নাই। তবে কষ্টে না, কৃতজ্ঞতার আনন্দে। মানুষের হৃদয়ের জন্য কৃতজ্ঞতার চেয়ে ভালো কোনও ওষুধ আজও আবিষ্কার হয় নাই। কাল সিডনি সময় রাত তিনটায় যখন ঘুমাতে যাই, তখনও বাচ্চু ভাই, পিপলু ভাই, অমিতাভ, জুলহাজরা হয়তো আমাদের বন্ধুদের ফোন দিয়ে যাচ্ছে ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবিতে বিবৃতিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য। আর আমি ঘুমাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার চোখের পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি কাত হয়ে শুয়ে, যাতে তিশা টের না পায়। ও আমার মেয়েকে ছড়া শোনাচ্ছে।”

সংস্কৃতিকর্মীদের এই একতায় মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ‘টেলিভিশন’ নির্মাতা বলেন, “সব সময় তো এরকম হয় না যে, আমরা আমাদের জড়তাকে ঠেলে একটা কোনও উদ্যোগ নিতে পারি, একসঙ্গে। সেই হিসাবে আজকের (১৫ নভেম্বর) দিনটা আমাদের দেশের শিল্পীদের জন্য একটা মনে রাখার মতো দিন। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবিতে ১৩০ জন শিল্পী একটা বিবৃতি দিয়েছেন, যেটা হয়তো কালকে (১৬ নভেম্বর) পত্রিকায় দেখবেন সবাই। আপনি যদি নামের লিস্ট দেখেন, তাহলে বুঝবেন কেন এটা আমাদের জন্য, আমাদের পরের জেনারেশনের জন্য একটা বিশেষ মানে বহন করে। এখানে এমন মানুষেরা আছেন যাদেরকে আপনি নিয়মিত বিবৃতিতে খুঁজে পাবেন না। এখানে মূল ধারা, বিকল্প ধারা, নতুন ধারা, পুরাতন ধারা নানা মত-পথের মানুষ আছেন। আমাদের মত ভিন্ন হতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা এক। আমাদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে আমরা এক। এখন আমরা জানি, আমরা যখন এক হয়েছি, আর কোনও কিছুই ‘আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’!”

‘শনিবার বিকেল’ ছবির মুক্তির অনুমতি বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সেন্সর বোর্ডের আপিল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। ফারুকীর প্রত্যাশা, সবার দাবি মাথায় নিয়ে এই সভায় তার ছবিটি মুক্তির অনুমতি পাবে।

উল্লেখ্য, গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’-এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের স্বনামধন্য অভিনেতারা। যার মধ্যে আছেন ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ছবিটির মহড়া শুরু হয়। আর শুটিং শুরু হয় ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি, ঢাকার কোক স্টুডিওতে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সনদ পাওয়ার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি ‘শনিবার বিকেল’।