১-১ এ অমীমাংসিত কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ের শেষ ক্ষণে। রেফারি
প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শেষের বাঁশি বাজানোর। ঠিক তখনই উরুগুয়ের গোলমুখে ঘানার ডমিনিখ
আদিয়াহর অসাধারণ হেড। বিপরীতে উরুগুয়ের গোলপোস্টের নিচে ফুটবল ইতিহাসের ‘সেরা সেভ’। না গোলরক্ষক ফার্নান্দো
মুসলেরা সেভটি দেননি। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে গোলটি ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন উরুগুয়ের
স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ।
লাল কার্ড দেখাতে রেফারির এক মুহূর্তও ভাবতে হয়নি। একইসঙ্গে ঘানার পক্ষে
পেনাল্টি। স্পট থেকে গোল করার সুযোগ। গোল করলেই সেমিফাইনালে ঘানা। আর হেরে বাদ
পড়বে উরুগুয়ে। কিন্তু না, ২০১০ সালের দক্ষিণ
আফ্রিকা বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে স্পট কিকে গোল করতে পারেননি ঘানার আসামোহা জিয়ান।
মুহূর্তেই বিষাদের নীলবর্ণে ঢেকে যায় ঘানার ফুটবলারদের চোখ-মুখ। আর উরুগুয়ের
শিবিরে বাঁধভাঙা উল্লাস। লাল কার্ড খেয়ে বেঞ্চে থাকা সুয়ারেজের বিশ্বজয় করা দৌড়।
যে দৌড় ঘানার ফুটবলারদের কাটা গায়ে নুনের ছিটা ছিটিয়েছে অবলীলায়।
শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ গোলে হেরে যায় ঘানা। প্রথমবারের মতো ফুটবল
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়া হলো না ‘ব্লাক স্টারদের’। মাঝে দুই বিশ্বকাপ গেলেও
দেখা হয়নি এই দুই দলের। তবে কাতার বিশ্বকাপের একই গ্রুপে পড়ে। গ্রুপ পর্বে নিজেদের
শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় লাতিন ও আফ্রিকার দল দুটি। ঘানার সামনে আসে প্রতিশোধের
সুযোগ। কিন্তু এই ম্যাচটি ২-০ গোলে হেরে যায় ঘানা। বাদ পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকে।
তবে দ্বিতীয় পর্বে জায়গা করে নিতে পারেনি দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
উরুগুয়েকেও। ম্যাচের শেষের দিকে বেঞ্চে থাকা ‘২০১০ এর নায়ক’ সেই সুয়ারেজকে কাঁদতে দেখা গেছে। কেননা একই গ্রুপের অপর
ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে দ্বিতীয় পর্বে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। আর ঘানার
সঙ্গে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে সুয়ারেজের দলকে। এই ঘটনায় ম্যাচ
শেষে ঘানার ফুটবলারদেরকেও কিছুটা খুশি দেখা গেছে। হাসতেই হাসতেই মাঠ ছেড়েছেন। আর
ডাগআউটে তখনও কাঁদছিলেন সুয়ারেজ। উরুগুয়ের ফুটবলারদের চোখেমুখে বিষাদের ছাপ। ঠিক
যেন ২০১০ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচের শেষের উল্টো চিত্র। মাঠের খেলায় ঘানা প্রতিশোধ নিতে
না পারলেও উরুগুয়েকে একই বিষাদ স্বাদ দিয়েছে।
দ্বিতীয় রাউন্ডে পর্তুগাল ও দ. কোরিয়া
অন্য গ্রুপের মতো গ্রুপ এইচের অবস্থাও ছিল জটিল। প্রথম দুই ম্যাচে দুই জয়ে ছয়
পয়েন্ট তুলে নিয়ে একদম সেফ জোনে ছিল পর্তুগাল। এই পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ
কোরিয়ার সঙ্গে ২-১ গোলে হারলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় পর্বে পা রাখে
রোনালদোর দল। আর পর্তুগালকে হারিয়ে চার পয়েন্টে নিয়ে দ্বিতীয় পর্বের টিকিট কাটে
এশিয়ান জায়ান্টরাও।
তবে ঘানাকে উরুগুয়ের সঙ্গে জিতলেই কোনও হিসাব ছাড়াই দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখতো।
তবে হেরে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এদিকে,
ঘানাকে
২-০ গোলে হারালে উরুগুয়ের পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। কোরিয়ারও সমান পয়েন্ট ছিল। এমনকি এই
দুই দলের গোল ব্যবধানও সমান ছিল। তবে বেশি গোল করার হিসাবে রাউন্ড অব সিক্সটিনের
টিকিট পায় কোরিয়া।