কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সাথে সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে পর্যটন ব্যবসার নামে পর্যটকদের চরম হয়রানির অভিযোগ উঠেছে কর্ণফূলী শিপইয়ার্ড নামের একটি জাহাজ কোম্পানির বিরুদ্ধে। ওই কোম্পানির তিনটি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে দ্বীপে পর্যটকদের ভ্রমণ করানো হয়।
সেন্টমার্টিন্সের সাথে এসব ছাড়া আর কোনও জাহাজ না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানিটি পর্যটকদের নিয়ে যা-ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। সবশেষ জাহাজটি মাঝ সমুদ্রে আটকে ছিল দীর্ঘ সময়। আর এই জাহাজেই আটকে ছিলেন চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী, অভিনেতা মাহফুজ, পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীসহ ‘প্রহেলিকা’ টিম।
জানা যায়, সেন্ট মার্টিন ও ছেঁড়া দ্বীপের বিভিন্ন লোকেশনে কয়েক দিন ধরে ‘প্রহেলিকা’ ছবির গানের দৃশ্য ধারণ হচ্ছে। শুটিং শেষে মঙ্গলবার বিকেলে সমুদ্রপথে কক্সবাজার ফিরছিল ইউনিট। বেলা আড়াইটায় সেন্ট মার্টিন থেকে ছেড়ে আসা সবাই রাত ১০টায় কক্সবাজার ফেরার কথা থাকলেও সবাই যখন ফেরেন, তখন সকাল ছয়টা।
চয়নিকা চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মধ্যসাগরে আমরা আটকে আছি টানা পাঁচ ঘণ্টা। রাত ৯টা থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত আমরা “প্রহেলিকা” টিম কর্ণফুলী ক্রুজ লাইনের এমভি বে ওয়ানে আছি মাঝসমুদ্রে। দূর থেকে দেখেছি, ভাটার কারণে আমাদের শিফট করে নিয়ে যাওয়ার জাহাজটার কী অবস্থা। কী যে যাচ্ছে সময়টা। সবাই ওপরওয়ালাকে ডাকছে।’’
এসময় জাহাজটির শত শত নারী ও শিশু যাত্রীদের পুরো রাত উপোস কাটাতে হয়েছে। এক হাজার তিনশ যাত্রীকে পুরো রাতদিন অতিবাহিত করতে হয়েছে ওই জাহাজটিতেই। কম্পানিটির এমন অনিয়ম জনিত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বিকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জাহাজ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত স্থানীয় প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠান। জাহাজ কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি বাহাদুর ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দিয়েছি যে, আর কোনও সময় আমাদের জাহাজে ট্রানজিট যাত্রী উঠানামা করা হবেনা। এমনকি নির্ধারিত নিয়ম মাফিক জাহাজ চালানোরও অঙ্গীকারনামা দিয়েছি।’
টেকনাফের সাথে প্রতি বছরের মতো ৮/১০ টি পর্যটক জাহাজ বন্ধ থাকার সুযোগে কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড কোম্পানি ৩টি জাহাজ নামিয়ে পর্যটকদের দ্বীপে আনা নেওয়ার কাজে নেমে পড়ে। গত কয়েক মাস ধরে কক্সবাজারের বাকখালী নদীর বিআইডাব্লিউটি নৌ ঘাট থেকে কর্ণফুলী নামের জাহাজটি চলাচল শুরু করে দ্বীপের সাথে।
এমভি বারো আউলিয়া নামের অপর একটি জাহাজ নিয়ে কক্সবাজারের নৌঘাট থেকে মাঝ সাগরে যাত্রীদের সেন্টমার্টিন যাতায়াতকারী জাহাজে যাত্রীদের ট্রানজিট কাজে নিয়োজিত থাকে। অপরদিকে একই কোম্পানির মালিকানাধীন বিলাস বহুল হিসাবে পরিচিত বে-ওয়ান নামের আরেকটি জাহাজ চলাচল করে চট্টগ্রাম থেকে দ্বীপে।
এসব বিষয় নিয়ে কর্ণফুলী শিপইয়ার্ডের কক্সবাজারে কর্মরত প্রতিনিধি বাহাদুর ইসলাম বলেন, ‘জাহাজগুলোর যাতায়াতে অনিয়ম হচ্ছে এটা অস্বীকার করার কোনও কারণ নেই। বাস্তবে জোয়ার ভাটাসহ যাত্রীদের দুইবার করে ওঠানামার কারণেই যাতায়াতে বিলম্ব হচ্ছে। মঙ্গলবারের ঘটনাটি আকস্মিক সাগর উত্তাল হবার কারণেই বিলম্ব এবং যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে।’