১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:৩৬:৫৩ অপরাহ্ন


বড়দিনে ‘বড়’ উৎসব হলো না টাইগারদের
ট্রেন্ড রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-২৫ ১৯:১০:১১
বড়দিনে ‘বড়’ উৎসব হলো না টাইগারদের


আগের দিন ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে উৎসবের মঞ্চটা প্রায় প্রস্তুতই ছিল। রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ১৮ রানে আরও ৩ উইকেট নেওয়ার পর বড় দিনে ‘বড়’ উৎসবের মঞ্চটা ছিল কেবল রাঙানোর অপেক্ষা। তাতে খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনে ভারতকে টেস্টে প্রথমবারের মতো হারানোর কীর্তিও সঙ্গী হতো। কিন্তু স্নায়ুচাপ ও ভারতের লেজের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় ঢাকা টেস্টে ৩ উইকেটের হার সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ওভারে আর্ম ডেলিভারিতে সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। এরপর অফস্পিনার মিরাজ আধিপত্য দেখিয়ে তুলে নেন আরও দুই উইকেট। ১৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ঢাকা টেস্টে জয়ের সুবাসও পেতে শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু অষ্টম উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ারের প্রতিরোধেই হাতের মুঠো থেকে ম্যাচটি বেরিয়ে গেছে। তাতে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর ভারতকে হারনোর সূর্বণ সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের।

তবে ঢাকা টেস্ট জয়ের নায়ক অশ্বিনকে ফেরানো যেত শুরুতেই। শর্ট লেগে ক্যাচ গেলেও মুমিনুল তা হাতে জমাতে পারলেন না। বরং তার ‘পিচ্ছিল’ হাত থেকে ক্যাচ পড়ে যাওয়ায় সেটাই হয়ে দাঁড়ায় ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার মোক্ষম মুহূর্ত। তখন কে জানতো, এটা কেবল ক্যাচ নয়, ম্যাচটাকেই হাতছাড়া করেছেন মুমিনুল! শেষ পর্যন্ত অশ্বিনের ৬২ বলে ৪২ রানের লড়াকু ইনিংসেই সফরকারীরা ম্যাচ জিতেছে।

জয়ের পথে অশ্বিনকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ার। তিনিও খেলেন ৪৬ বলে ২৯ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। ১৪৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর অশ্বিন-আইয়ারের ৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি-ই বড় দিনে বাংলাদেশের উৎসবের উপলক্ষটা ভণ্ডুল করেছে। 

তবে অষ্টম উইকেটে এই দুই ব্যাটারের বড় জুটির পরও আশাবাদী ছিলেন সাকিব। বিশ্বাসের ভেলায় চড়ে সব রকম চেষ্টাও করে যাচ্ছিলেন। ৪৭তম ওভারে নিয়ে আসেন এই ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া মিরাজকে। ভারতের তখনও জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৬ রান। অধিনায়ক আশায় ছিলেন বিরাট কোহলি, ঋষভ পান্ত, অক্ষর প্যাটেল, চেতেশ্বর পূজারা, শুবমান গিলের মতো ব্যাটারদের যিনি নাভিশ্বাস তুলতে পারেন, সেই মিরাজ শেষ দিকে হয়তো একটা ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট উপহার দেবেন। কিন্তু প্রথম বলেই অশ্বিন যখন মিড উইকেট দিয়ে মিরাজকে বিশাল ছক্কা মারলেন, তখন সাকিব নিশ্চিত হয়ে যান ম্যাচটি তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। সাকিবের বিশ্বাস ভাঙতেই যেন ওই ওভারে আরও তৎপর উঠলেন অশ্বিন। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে পর পর দুই চার মেরে ভারতকে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে। তাতে আগের দিন শেষ সেশনের প্রথম ঘণ্টা এবং রবিবার প্রথম সেশনের প্রথম ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের ইতি ঘটে মিরাজের ওই ওভারে।

অবশ্য বোলারদের অবিশ্বাস্য লড়াইয়ে ঢাকা টেস্টে ভারতকে কোণঠাসা করা গেলেও ব্যাটারদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হচ্ছে। মিরপুরের উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে সেটি কাজে লাগাতে পারনি বাংলাদেশ। ২২৭ রানের প্রথম ইনিংসই বাংলাদেশকে শুরুতে পিছিয়ে দিয়েছে। তার পরও বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে ৩১৪ রানে আটকে রাখা গেছে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের সহায়তা থাকলে হয়তো তাদের আরও আগেই বেঁধে ফেলা যেত। কিন্তু সেটি না হওয়ায় ২১ রানে জীবন পাওয়া শ্রেয়াস আইয়ার খেলেছেন ৮৭ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। আইয়ারের মতো পান্তও একাধিক জীবন পেয়ে ৯৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। ঠিক সময়ে তাদের ফেরানো গেলে লিড নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো সফরকারী দল।

৮৭ রানে পিছিয়ে থেকে সাকিবরা দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ব্যাটারদের ভুল পরিকল্পনা, ভুল শট সিলেকশনে প্রতিষ্ঠিতরা একে একে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। শুধু কয়েকবার ‘জীবন’ পাওয়া লিটনের ৭৩ রানের ইনিংসেই ১৪৫ রানের চ্যালেঞ্জিং একটা লক্ষ্য দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ভারতের জন্য টার্গেট মামুলী হলেও সাকিব-মিরাজরা লক্ষ্যটা কঠিনই করে তুলেছিলেন। তার পর তো দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংটাই বেশি করে আক্ষেপে পোড়ানোর কথা তাদের। রানটা একটু বেশি হলে ভারতের ওপর আরও চাপ তৈরি করা যেত।

তবে ছোট এই লক্ষ্যেও সামান্য ভাগ্যের ছোঁয়া এবং ফিল্ডারদের কাছ থেকে সহায়তা পেলে দিনটা বড় উৎসবে রঙিন হতো বাংলাদেশের।