০৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৯:২৩:৩৭ পূর্বাহ্ন


১৮ বছর পর সিনেমায় ফিরছেন অপি করিম
সৈয়দ ইমরুল সামাদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৩-০১-১৫ ১৯:৪০:৪২
১৮ বছর পর সিনেমায় ফিরছেন অপি করিম


বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘মায়ার জঞ্জাল’ অবশেষে ভারত ও বাংলাদেশের সিনেমা হলে আসছে। ভাষার মাসে (ফেব্রুয়ারি) দুই বাংলায় এটি একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন ছবিটির বাংলাদেশী প্রযোজক জসীম আহমেদ। এর অংশ হিসেবে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ফার্স্ট লুক প্রকাশ হয়েছে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোটগল্প অবলম্বনে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘মায়ার জঞ্জাল’ পরিচালনা করেছেন ভারতের ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী। ছবিটির মাধ্যমে অনেক বছর পর বড় পর্দায় দেখা যাবে ঢাকাই অভিনেত্রী অপি করিমকে। ছবিটিতে তার চরিত্রের নাম সোমা। স্বামী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তার অসহায় সংসার। স্বামী বেকার। এ কারণে সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে একটি বাসায় কেয়ারটেকারের চাকরি নেয় সোমা।

২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় ‘ব্যাচেলর’ ছিল অপি করিমের প্রথম চলচ্চিত্র। এরপর আর বড় পর্দায় পাওয়া যায়নি তাকে। ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর মাধ্যমে আবারও সিনেমায় ফিরছেন তিনি।

সোমার স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টলিউডের অন্যতম অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। এছাড়াও আছেন ঢাকার সোহেল মণ্ডল, কলকাতার পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, শাওলি চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। ছবিটির মুক্তি উপলক্ষে কলকাতার শিল্পীদের ঢাকায় আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন প্রযোজক জসীম আহমেদ।

২০১৮ সালে ছবিটির কলকাতা অংশের শুটিংয়ে জ্যেষ্ঠ অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অংশ নেন অপি করিম। তখন অপিকে পাশে রেখে পরাণ ছবিটি প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভালো দোকান দেখে মাংস কিনলেই হয় না, রাঁধুনিও চমৎকার হতে হয়। এখানের রাধুঁনি চমৎকার। আর মাংসও খাঁটি। দারুণ কিছু হতে যাচ্ছে।’

এদিকে যৌথ প্রযোজনার এই প্রজেক্ট প্রসঙ্গে ইন্দ্রনীল ও জসীম আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। দুজনেরই প্রধান উৎসাহের বিষয় সিনেমা। ঢাকা ও কলকাতায় চলচ্চিত্র চর্চার ইতিহাস বহু পুরনো। দুই দেশেই চলচ্চিত্র কর্মীদের দক্ষতা ও প্রতিভা প্রশ্নাতীত। তবু পরীক্ষামূলক বাংলা ছবির পিঠ ক্রমে দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। সিনেমা হল থেকে সরে যাওয়ার পরে তা ইন্টারনেট বা টেলিভিশনের মাধ্যমে জনপ্রিয় হলেও প্রযোজকরা বিনিয়োগ তুলে আনতে পারছেন না। এককথায় অন্যধারার বাংলা ছবির ব্র্যান্ড পারসেপশন দর্শকের কাছে খুব দুর্বল।’

দু’জনেই মনে করেন, এই অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার উপায় হলো বাংলা ছবিকে আন্তর্জাতিক বাজারের কাছে নিয়ে যাওয়া। তারা বলেছেন, ‘‘এতে দর্শকের কাছে বাংলা ছবির ব্র্যান্ড পারসেপশনে পরিবর্তন আসার পাশাপাশি ‘মায়ার জঞ্জাল’ (ডেব্রি অব ডিজায়ার) ছবির একটা আন্তর্জাতিক বাজার খুলে গেলে তার প্রভাব আমাদের দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সুদূরপ্রসারী হবে।’

দুই প্রযোজকের তথ্য অনুযায়ী, এই ছবির বাজেট সীমিত। তাদের ভাষ্য, ‘আপাতদৃষ্টিতে এই ছবি তথাকথিত মনোরঞ্জনমূলক নয়। তবে আমাদের উদ্দেশ্যের সিকিভাগও সফল হলে তার প্রভাব দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য সার্বিকভাবে ইতিবাচক হবে।’

চীনের মর্যাদাসম্পন্ন সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এশিয়ান নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ডের অফিসিয়াল সিলেকশনে ‘মায়ার জঞ্জাল’ ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। এর ইউরোপিয়ান প্রিমিয়ার হয় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ফিল্মস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগে। এরপর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় জোগজা-নেটপ্যাক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের এশিয়ান পার্সপেক্টিভস বিভাগে আমন্ত্রণ পায় ছবিটি। এছাড়া ইতালির রোমে এশিয়াটিকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতা বিভাগ ‘এনকাউন্টার উইথ এশিয়ান সিনেমা’য় বেস্ট ফিচার ফিল্ম জুরি অ্যাওয়ার্ড, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান কমপিটিশনে প্রতিযোগিতা করে চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার পেয়েছে ‘মায়ার জঞ্জাল’।

২০১৩ সালে ‘ফড়িং’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় আসেন ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী। এরপর টেলিভিশনের জন্য ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’ ও ‘ভালোবাসার শহর’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি পরিচালনা করেন তিনি। অনেক বছর পর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনায় ফিরলেন কলকাতার এই প্রশংসিত নির্মাতা।

‘মায়ার জঞ্জাল’ (ডেব্রি অব ডিজায়ার) ছবির সহ-প্রযোজক হিসেবে আছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ফ্লিপবুক। আরেক প্রযোজক জসীম আহমেদ তিনটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি পরিচালনা করে দেশ-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছেন। এগুলো হলো ‘দাগ’, ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ ও ‘চকোলেট’।