১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৫০:১৩ অপরাহ্ন


ওয়েব সিরিজ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে সালমান শাহ্ পরিবার
সোহেল জুলফিকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৩-০২-০৬ ১২:১৪:৫৬
ওয়েব সিরিজ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে সালমান শাহ্ পরিবার


চার বছরে মাত্র ২৭ সিনেমা করে যিনি অজেয় হয়ে আছেন বাংলা চলচ্চিত্রে, তিনি সালমান শাহ্। মাত্র ২৪ বছর বয়সে অস্বাভাবিক এক মৃত্যুতে থেমে যায় এই অমর নায়কের পথচলা। সেটি কি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা; সেই জট খোলেনি ২৭ বছরেও।

মূলত সেই রহস্যের ওপর আলোকপাত করই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই নির্মাণ করেছে ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। তবে ঠিক কোন তারকার মৃত্যু রহস্য এই সিরিজের উপজীব্য, সেই নামটি অবশ্য নির্মাতা তানিম রহমান অংশু উল্লেখ করেননি সচেতনভাবেই। যদিও ট্রেলার এবং সংশ্লিষ্টদের অভিব্যক্তিতে এটুকু স্পষ্ট, সিরিজটির গল্পে দানা বেঁধেছে সালমান শাহের মৃত্যু রহস্য নিয়েই। কারণ এমন ঘটনা এই বাংলায় আর কোনও সুপারহিট নায়কের বেলায় ঘটেনি। তাই নয়, সিরিজের নামটিও মনে করিয়ে দেয় সালমান শাহ্‌র কথা। কারণ এই নায়কের শেষ সিনেমার নাম ‘বুকের ভেতর আগুন’। আর অপূর্ব অভিনীত অংশুর সিরিজটির নাম ‘বুকের মধ্যে আগুন’!

এগুলো পুরনো তথ্য ও খবর। যা গত সপ্তাহে ফলাও করে প্রচার হয়েছে দেশের প্রায় সবকটি গণমাধ্যমে। কারণ, এটি নিয়ে ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর অভিজাত এক ক্লাবে হইচই বাংলাদেশ কর্তারা ঘটা করে জানান দেয়।

সেই ঘটনার দুই সপ্তাহের মাথায় কড়া প্রতিধ্বনি এলো সালমান শাহ’র পরিবারের পক্ষ থেকে। দুদিন হলো মা নিলুফার চৌধুরী জানান দেন, সিরিজটি বন্ধের দাবিতে আইনজীবী ফারুক আহমেদের মাধ্যমে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন। যার মাধ্যমে সালমান শাহ-এর নামে গান, নাটক, সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন। তাই নয়, ‘বুকের মধ্যে আগুন’ নামে ওয়েব সিরিজ নির্মাতা, কলাকুশলী ও অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে অচিরেই ফরমান জারির কথাও জানান নীলা চৌধুরী।

তবে সেই ফরমান প্রকাশের আগেই সালমান শাহ’র মামা আলমগীর কুমকুম রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মইনুল ইসলামের মাধ্যমে।

নোটিশে বলা হয়, আমার মক্কেলের ভাগনা শালমান শাহকে মৃত অবস্থায় তাহার বাসায় পাওয়া যায়। আমার মক্কেলের ভাগনার রহস্যজনক মৃত্যুকে একটি মহল ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে তাহা আত্মহত্যা বলিয়া প্রচার করে। এই নিয়ে আমার মক্কেলের দায়েরী মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে। আমার মক্কেল গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করিতেছেন যে, সম্প্রতি একটি মহল আমার মক্কেলের ভাগনার মৃত্যু রহস্য নিয়া ধারাবাহিক সিরিজ নির্মাণের পায়তারা করিতেছে। একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়া এহেন সিরিজ নির্মাণ করা আইন সম্মত নহে। তাই যে বা যাহারা উক্তরূপ সিরিজ নির্মাণের চেষ্টা করিতেছেন, তাহারা এহেন কর্ম হইতে বিরত থাকিবেন। অন্যাথায় আমার মক্কেল আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হইবেন।

এদিকে এই লিগ্যাল নোটিশ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় নির্মাতা তানিম রহমান অংশুর সঙ্গে। তিনি জানান, এমন কোনও নোটিশ এখনও পাননি। মাত্রই জানলেন। নোটিশের বক্তব্য জানতে পেরে তিনি বলেন, ‘এই মামলা বা লিগ্যাল নোটিশের সাথে আমার কোনও কাজের সংযুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। ফলে এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারছি না।’

জানা গেছে, সিরিজটি নিয়ে সালমান শাহ্ পরিবার ও ভক্তদের মধ্যে অস্থিরতা বা অস্বস্তি তৈরি হলেও বেশ স্বাভাবিক অবস্থানে রয়েছেন ‘বুকের মধ্যে আগুন’ সংশ্লিষ্টরা। কারণ, সিরিজের কোথাও সালমান শাহ্-এর নাম উল্লেখ নেই। যদিও ট্রেলারের একটি দৃশ্যে ক্ল্যাপস্টিকে দেখা যায় ‘কল্পনার নায়ক’ নামটি। যা মনে করিয়ে দেয় সালমান শাহর সুপারহিট ‘স্বপ্নের নায়ক’ ছবিটির নাম। এতে নায়কের নাম দেয়া হয় আরমান রহমান জয়। দেখানো হয় হ্যাট-কটি পরা সালমান শাহের আদলে গড়া এক সুপারস্টারের ব্যাকলুক। যে কি না ক্যারিয়ারের শীর্ষে উঠে এক অন্ধকার রহস্যে জড়িয়ে যায়। সেই সুপারস্টারের জীবন নিঃশ্বেস হয়ে গিয়েছিলো এক রাত্রে। সেটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা? এমন প্রশ্ন রেখে ট্রেলারের সামনে আসেন অভিনেতা অপূর্ব। যিনি নিজেকে পরিচয় দেন এভাবে, ‘আমি এএসপি গোলাম মামুন। এই মামলাটির দায়িত্ব নিচ্ছি। দেখি এতোদিনের এই অজানা রহস্য কতোটা সল্ভ করতে পারি।’

সম্ভবত সালমান শাহ পরিবার ও ভক্তদের আপত্তি এখানেই, ২৭ বছরের অমিমাংসিত রহস্যের ফলাফল না জানি কী তুলে আনে এই সিরিজ। 

আলফা-আইয়ের প্রযোজনায় নির্মিত এই সিরিজটি চলতি ফেব্রুয়ারিতে হইচই অ্যাপে মুক্তির কথা রয়েছে। এরমধ্যে শুটিং শেষ করে অপূর্ব উড়াল দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে তিনি বার্তা পাঠিয়েছেন এই বলে, ‘‘বুকের মধ্যে আগুন’ নিয়ে দূরে থাকতে হচ্ছে। খুব ভালো একটা কাজ হয়েছে। আপনারা দেখবেন আশা করি।’’ 

ঢাকাই সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে রূপালি পর্দায় পা রাখেন। মৃত্যুর আগে মাত্র তিন বছরে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন। যার সবগুলোই সুপারহিট।

জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনে নিজের ফ্ল্যাটে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় এই নায়কের। তিন দফা তদন্তের পর এ চিত্রনায়কের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলা হলেও তা মানতে রাজি নয় তার পরিবার। তার মা ও মামার দাবি এটি ‘হত্যাকাণ্ড’। সালমানের বেশিরভাগ ভক্তও সেটাই বিশ্বাস করে।