আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রয়াত সাংবাদিক ও সংগীতব্যক্তিত্ব সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন। প্রতি বছর এই দিনটি উপলক্ষে সঞ্জীব ভক্তরা ঢাকা ইউনিভার্সিটি টিএসসি'তে আয়োজন করে আসছে ‘সঞ্জীব উৎসব’।
বরাবরের মতো এবারও হচ্ছে এই আয়োজন। আজ বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে শুরু হয় ‘সঞ্জীব উৎসব’।
সেখানে গান পরিবেশন করছেন একজাক সংগীততারকা। এদের মধ্যে রয়েছেন লিমন, জয় শাহরিয়ার, মুয়ীজ মাহফুজ, সন্ধি, আহমেদ হাসান সানি, সাহস মুস্তাফিজ, সুহৃদ স্বাগত, শতাব্দী ভব, অর্ঘ্য, ঘুণপোকা, রাজেশ মজুমদার ও রাশেদ।
আয়োজকরা জানান, ২০১০ সাল থেকে নিয়মিত এই উৎসবের আয়োজন করে আসছেন তারা।
সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
গায়ক হিসেবে সঞ্জীব চৌধুরী বেশ পরিচিত ছিল। পাশাপাশি একজন খ্যাতিমান সাংবাদিকও ছিলেন তিনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রে কাজ করার সুবাদে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন এই কিংবদন্তি।
বাংলাদেশের লোকসংগীত, সুফীবাদ ও সুফী গানের প্রতি তার ছিলো এক অন্যরকম টান। তাদের যে সুরসাধনার জায়গা, সেটিকে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। সাধনার সে স্তরে পৌঁছুতে হলে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে বলে তিনি মনে করতেন। সিলেটের মরমী গায়ক হাসন রাজার গান ছিলো সঞ্জীবের খুব প্রিয়। বাউল শাহ আবদুল করিমের ‘গাড়ি চলে না’ গানটি তার অনুমতি নিয়ে সঞ্জীব গেয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীত অনুরাগী ছিলেন তিনি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উভয় সংগীতের সাথেই ছিলো তার পরিচিতি। তার প্রিয় গায়কের তালিকায় ছিলেন বব ডিলান, পিংক ফ্লয়েড, অ্যাল স্টুয়ার্ট প্রমুখ। মরক্কো ও স্পেনের সংগীতও বাদ যায়নি তার তালিকা থেকে।
‘আমি তোমাকেই বলে দেবো’, ‘সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে’, ‘হাতের উপর হাতের পরশ’, ‘চোখটা এত পোড়ায় কেন’, ‘বায়োস্কোপ’, ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘নৌকা ভ্রমণ’, ‘হৃদয়ের দাবি’, ‘কোন মেস্তিরি বানাইয়াছে নাও’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’ সহ আরো বহু গান আজ জনপ্রিয় সঞ্জীব চৌধুরীর যাদুকরী কন্ঠের জন্য।
২০০৭ সালের ১৮ নভেম্বর রাত ১২.১০ মিনিটে (১৯ নভেম্বর ধরা হয়) অ্যাপোলো হাসপাতালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা যান সঞ্জীব চৌধুরী। তখন তার বয়স হয়েছিলো ৪৩ বছর। মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আলেমা নাসরীন শিল্পী ও কন্যাসন্তান কিংবদন্তীর কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তিনি সবসময়ই চাইতেন মানবকল্যাণে কাজে লাগতে, সংস্কারবোধের উপরে উঠে সঞ্জীব চৌধুরী একজন মানুষ হবার আশা রাখতেন এবং মানবতারই গান গাইতেন তার গীটারের তারে তারে। মৃত্যুর পরও বিজ্ঞান তথা চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতি রেখে গেলেন শেষ অবদান- তার দেহটি। আজও ঢাকা মেডিকেল কলেজে তার কঙ্কালটি চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ুয়া ছাত্রদের পড়ার কাজে লাগছে। কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নয়, নয় কোনো শেষ সমাধি। তিনি বেছে নিয়েছিলেন মানবতার সোপানে তার দেহ ও প্রাণকে সমর্পণ করতে, এবং তা-ই করলেন। সঞ্জীব চৌধুরীর স্মৃতিতে তার প্রিয়জন, শ্রোতা ও অনুরাগীদের চোখ সমুদ্রের স্বাদ পায়,
চোখটা এতো পোড়ায় কেন…
ও পোড়া চোখ, সমুদ্রে যাও
সমুদ্র কি তোমার ছেলে
আদর দিয়ে চোখে মাখাও….?