১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৩:৩৬:০৯ অপরাহ্ন


ঢাকায় তিন দিনের ‘লালন স্মরণোৎসব’
আগন্তুক আলেয়া
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৪-১০-১৭ ১২:৪১:০৯
ঢাকায় তিন দিনের ‘লালন স্মরণোৎসব’


লালন সাঁইয়ের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৩ দিনের ‘লালন স্মরণোৎসব ২০২৪’। আজ (১৭ অক্টোবর) থেকে এই উৎসবের পর্দা উঠছে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে।

বুধবার উৎসব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন শিল্পকলার সদ্য নিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। তার সঙ্গে আরও ছিলেন সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ, একাডেমির বিভিন্ন বিভাগের নবনিযুক্ত পরিচালক ও কর্মকর্তাবৃন্দ। 

১৭-১৯ অক্টোবর ৩ দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তুলে ধরে একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘পুরো আয়োজনের ব্যয় একাডেমির ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হবে।’

উৎসবের জমজমাট আয়োজনের প্রচারে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। পরে বিভাগভিত্তিক ৩ দিনের আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিচালকবৃন্দ।

এরপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন ৭ মিলনায়তনের নামকরণের জন্য সাংবাদিকদের কাছে ৭ গুণী ব্যক্তিত্বের নাম আহ্বান করেছেন মহাপরিচালক। এছাড়া প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ৩টি লক্ষ্য বাস্তবায়নের বিষয়ও তুলে ধরেন মহাপরিচালক।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে স্পষ্ট করা হয়, তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্রেশন ভিত্তিতে লালন স্মরণোৎসবে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকবে। লালন স্মরণোৎসবের মধ্য দিয়েই রাজধানীকেন্দ্রীক সাংস্কৃতিক স্থবিরতা কিছুটা কাটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে মহাত্মা লালন সাঁই-এর অসাম্প্রদায়িক দর্শন, জাতিভেদ বিরোধী ভাবধারা তরুণ প্রজন্মসহ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে সেই প্রত্যাশার কথাও ওঠে আসে কর্তাদের কণ্ঠে।

উৎসবের আয়োজন সাজানো হলো যেভাবে

আজ ১৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে। ‘আশাসিন্ধু তীরে’ শীর্ষক প্রথম দিনের আয়োজন উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান।

গানে ও তত্ত্বে ফকির লালন সাঁইকে উপস্থাপন করবেন শিল্পী অরূপ রাহী ও জহুরা ফকিরানী।

দ্বিতীয় দিন (১৮ অক্টোবর), শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে আয়োজন করা হবে সাধুমেলা ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক।

তৃতীয় দিন (১৯ অক্টোবর), শনিবার বিকাল ৪টায় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ১ম পর্বে ‘জাতিসত্তার প্রশ্ন এবং বাউল-ফকির পরিবেশনার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক আ-আল মামুন। আলোচনা করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম; লেখক ও সাংবাদিক এবং পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, নাট্যকার, লেখক ও গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান।  সভাপতির বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক।

২য় পর্বে সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে দেশবরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে লালন স্মরণোৎসব ‘ধরো মানুষ রূপ নেহারে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ এবং সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক।

এক নজরে লালন শাহ

লালন শাহ, লালন সাঁই, মহাত্মা লালন, বাউল সম্রাট, মরমি সাধক, লালন ফকির, গুরুজি -এমন অনেক নামে পরিচিত তিনি। তবে শিষ্যদের কাছে তিনি কেবলই ‘সাঁইজি’ নামে পরিচিত। লালন জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ, গোত্রের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষ ও মানবতাকে বড় করে দেখেছেন।শুধু জাত-পাতের বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন না, সামাজিক অনাচার, বিভেদ বৈষম্য এবং সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এমনই এক বিস্ময়কর ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন লালন সাঁই।

আজ (১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সাল) ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান এই মরমী সাধকের মৃত্যুদিবস। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১১৬ বছর।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য যখন অস্তমিত, ইংরেজদের শাসনে দিশেহারা উপমহাদেশের জনগণ, গ্রামীণ সমাজ ধর্ম জাত-পাত ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত- বাঙালির জীবনের ওই ক্রান্তিকালে ১৭৭৪ সালের এই দিনে (১৭ অক্টোবর) লালন ফকিরের আবির্ভাব ঘটে। তিনি চেয়েছিলেন একটি জাত ধর্ম বর্ণ গোত্রহীন সমাজ গড়ে তুলতে। সবকিছুর ওপরে তিনি স্থান দিয়েছিলেন মানবতাবাদকে।