১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৩৪:৫৬ অপরাহ্ন


রোমান পোলানস্কি: বিখ্যাত নির্মাণে, কুখ্যাত ধর্ষণ অভিযোগে!
আগন্তুক আলেয়া
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৪-১০-২৫ ১৩:০৯:৫৩
রোমান পোলানস্কি: বিখ্যাত নির্মাণে, কুখ্যাত ধর্ষণ অভিযোগে!


রোমান পোলানস্কি একজন খ্যাতিমান কিন্তু বিতর্কিত মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা। যিনি তার অসাধারণ সিনেমাগুলো এবং একাধিক ধর্ষণের অভিযোগে আইনি জটিলতার জন্য আলোচিত।

পোলানস্কি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা অর্জন করেন ‘রোজমেরিজ বেবি’ (১৯৬৮), ‘চায়না টাউন’ (১৯৭৪) এবং ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ (২০০২)-এর মতো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এরমধ্যে ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি সেরা পরিচালক হিসেবে অস্কার জয় করেন। 

অস্কারের বাইরেও তার কাজগুলো মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা, মানবিক ট্রমা এবং গল্পের সূক্ষ্ম উপস্থাপনার জন্য প্রশংসিত বিশ্বজুড়ে। আজও তার অনেক চলচ্চিত্রকে সিনেমার ইতিহাসে ক্লাসিক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পর্দার এই নান্দনিক উজ্জ্বলাতা ততোটাই ম্লান হয়ে যায় তখন নির্মাতার বাস্তব জীবনে চোখ রাখা হয়।

কারণ, শিল্পীসত্ত্বার পাশাপাশি পোলানস্কি কয়েক দশক ধরে আইনি সমস্যায় জড়িয়ে আছেন। ১৯৭৭ সালে, তিনি লস অ্যাঞ্জেলসে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। পরে তিনি অনৈতিক যৌন সম্পর্কের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, তবে ১৯৭৮ সালে সাজা ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি পলাতক আসামি হিসেবে ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে বসবাস করছেন এবং গ্রেফতার এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে আর ফেরা হয়নি তার।

বছরের পর বছর ধরে তার বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ ওঠে, যা তার নির্মাণ খ্যাতিকে আরও কলঙ্কিত করে। পোলানস্কি সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও, বিশেষত #MeToo আন্দোলনের পর ধর্ষণ বিতর্ক আরও জোরালো হয়ে ওঠে, যেখানে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

২০১৯ সালে ধর্ষণ বিতর্কের কারণে তাকে অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার শিল্পীসত্তা ও ব্যক্তিগত আচরণের মধ্যে জটিল মেলবন্ধনের একটি উদাহরণ হয়ে রয়ে গেছে বিশ্ব চলচ্চিত্রে।

তবে আশার কথা হলো, ৫১ বছর আগে এক নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগটি সম্প্রতি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ, ১৯৭৩ সালে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছেন রোমান। যার মামলা চলছিলো লস অ্যাঞ্জেলেসে। সেটি আর চলবে না বলে জানিয়েছে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি।

পোলানস্কির আইনজীবী আলেকজান্ডার রুফাস-আইজাকস ২২ অক্টোবর এএফপিকে নিশ্চিত করেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা খারিজ করা হয়েছে।’

বাদীর আইনজীবী গ্লোরিয়া অলরেডও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুই পক্ষের সন্তুষ্টি অনুযায়ী অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছে।’

২০২৩ সালের জুন মাসে দায়ের করা এই ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, পোলানস্কি ১৯৭৩ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের বেনেডিক্ট ক্যানিয়ন এলাকায় তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। মামলার বিবৃতিতে বলা হয়, পোলানস্কির সঙ্গে প্রথমে এক পার্টিতে পরিচয় হয়েছিল, এরপর তিনি তাকে ডিনারে আমন্ত্রণ জানান, টেকিলা পান করান এবং বাড়িতে নিয়ে যান, যেখানে ওই কিশোরী অজ্ঞান হয়ে তার বিছানায় শুয়ে পড়ে।

‘বাদী স্মরণ করেন, তিনি যখন জেগে ওঠেন, তখন পোলানস্কিকে বিছানায় তার পাশে শুয়ে থাকতে দেখেন’, মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। ‘‘তখন পোলানস্কি বলেন, তিনি তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে চান। বাদী, যিনি তখনও ধোঁয়াশায় ছিলেন, তাকে ‘না’ বলেন এবং অনুরোধ করেন, ‘দয়া করে এটি করবেন না’।’’

২০১৭ সালে একটি সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী গ্লোরিয়া অলরেডের সঙ্গে উপস্থিত হয়ে বাদী নিজেকে রবিন এম. নামে পরিচয় দেন এবং জানান, ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর। পোলানস্কি সেই সময় তার আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মি. পোলানস্কি অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছেন এবং তার মতে, এ ধরনের মামলার জন্য আদালতেই যথাযথ বিচার হওয়া উচিত।’

যদিও সেই মামলাটি এতোবছর পর নিষ্পত্তি হলো আদালতের বাইরে!

পোলানস্কি ১৯৭৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চোখে একজন পলাতক কিংবা ফেরারী। তিনি ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের মামলায় রায় ঘোষণার আগের দিন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং তারপর থেকে দেশে ফিরতে পারেননি, কারণ তাকে গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে এই মামলার নিষ্পত্তি ও তার প্রত্যর্পণের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে।

সম্প্রতি প্যারিসেও পোলানস্কির বিরুদ্ধে আরেকটি মানহানি মামলা হয়েছিল। অভিনেত্রী শার্লট লুইস অভিযোগ করেছিলেন, পোলানস্কি তাকে ১৬ বছর বয়সে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। ২০১৯ সালে ফরাসি ম্যাগাজিন প্যারিস ম্যাচ-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পোলানস্কি লুইসের অভিযোগকে ‘জঘন্য মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেন। যার কারণে লুইস তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। তবে চলতি বছরের মে মাসে এই মামলায় পোলানস্কিকে খালাস দেওয়া হয়।

সূত্র: এএফপি ও ভ্যারাইটি