০৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:৩৫:২৮ পূর্বাহ্ন


‘পাখি হত্যা’ মামলার আসামী বললেন ‘পৃথিবী সর্বপ্রাণের হোক’
ট্রেন্ড রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
‘পাখি হত্যা’ মামলার আসামী বললেন ‘পৃথিবী সর্বপ্রাণের হোক’ মেজবাউর রহমান সুমন


‘হাওয়ার’ গতিবেগ তবুও কমেনি, যতোটা কমার কথা ছিলো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ লঙ্ঘন বিতর্কে। চতুর্থ সপ্তাহে (১৯-২৫ আগস্ট) এসেও দেশের পঞ্চাশের বেশি হলে চলছে মেজবাউর রহমান সুমনের ছবিটি।

‘হাওয়া’র একাধিক দৃশ্যে একটি শালিক পাখিকে খাঁচাবন্দি করে রাখার দৃশ্য রয়েছে। এছাড়া ছবিটির প্রধান চরিত্র চাঁন মাঝি পাখির মাংস খাচ্ছেন দেখানো হয়েছে। তাই ছবিটির বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পরিচালক সুমনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। বুধবার (১৭ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নারগিস সুলতানা বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। এতে  ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে সুমনের কাছে! 

এ নিয়ে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে দেশের বেশিরভাগ শিল্পী-নির্মাতা বিস্ময় আর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রীতিমতো প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। তবে সেই ঝড় আপাতত থামালেন অভিযুক্ত নির্মাতা নিজেই। বললেন, ‘মামলার সাক্ষী শালিক পাখি।’ বোঝাতে চাইলেন, শুটিং শেষে পাখিটিকে যে তিনি পরম মমতায় ছেড়ে দিয়েছেন সেটার বড় সাক্ষী তো শালিক নিজেই।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাতে সুমন তার সোশ্যাল হ্যান্ডেলে চলমান শালিক বিতর্ক আর মামলা প্রসঙ্গে বিস্তারিত মুখ খোলেন।

বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে আমার ব্যান্ড মেঘদল-এর জন্য নির্মাণ করেছিলাম ‘এসো আমার শহরে’। সেখানে এই নেক্রপলিস সিটিতে কিছু প্রতীকী বন্যপ্রাণীকে দেখিয়েছিলাম। ওদের শহরের ভেতর নানা জায়গায় দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু এই মৃত নগরে মানুষহীন রাস্তাঘাটে বন্যপ্রাণী কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে!! তার উদ্দেশ্যই বা কি? আমি মনে করেছিলাম, এই নগর শুধু মানুষের নয়, অন্য প্রাণীর জন্যও আবাসস্থল হওয়ার কথা ছিলো।’’

আরও যোগ করেন, ‘‘প্রতিদিন এই শহরে অসংখ্য প্রাণীদের আমরা নিয়ে আসি শুধুমাত্র ভোগের জন্য। হয়তো মানুষের জীবনধারণের জন্য সেটা আমাদের করতেও হয়। কিন্তু মায়া তো নিঃশেষ হবার নয়। এই সর্বপ্রাণের মায়াই ওই মিউজিক ভিডিওতে দেখাতে চেয়েছিলাম। কিছু দিন আগেও ‘কোথায় পালাবে বলো রূপবান’ নামে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির জন্য একটি ছোট ছবি নির্মাণ করি। সেখানে চিড়িয়াখানা থেকে একটি বাঘ পালিয়ে যায়। তাকে কর্তৃপক্ষ খাঁচায় বন্দি করতে চায়। পাশাপাশি এক নারীকেও বন্দি করতে চায় সমাজের কিছু চোখ। সে যাই হোক, আমার পূর্বের এই দুটি কাজের ভেতর দিয়ে বলতে চেয়েছি, প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে আমার গল্প বলা নতুন নয়। বরং এই কাজগুলোতে সর্বপ্রাণের দায় সবসময়ই ছিলো।’’

এরপর সরাসরি কথা বলেন ‘হাওয়া’র পাখটিকে নিয়ে। সুমন বলেন, ‘‘নির্মাতা হিসাবে আমি এটুকুই বলতে চাই, ‘হাওয়া’র পাখিটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে আর এই নির্মাণের জন্য যে সিনেমাটিক রিয়্যালিটি তৈরি করতে হয়েছে সেটা সত্য নয়। ছবির শুরুতে ডিসক্লেইমারে আমরা সুস্পস্টভাবে উল্লেখ করেছি সেটা। পাখিটির দৃশ্য ধারণের পর আমরা তাকে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আর নৌকায় যে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছি সেটা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নির্মাণ করা। আর চানমাঝি যে তার প্রিয় পাখিটিকে খেয়ে ফেলে সেটা কি শুধু ভোগ!!? নাকি সমাজের ভেতর জমতে থাকা হিংস্রতা? আর আমি শুধু ঐ বোধটাকেই ইঙ্গিত করেছি আর সেটা নির্মাণ করেছি সিনেমার ভাষার ভেতর দিয়ে। পৃথিবী সর্বপ্রাণের হোক।’’

এর আগে ‘হাওয়া’র প্রদর্শনী বন্ধের দাবি তোলে পরিবেশবাদী ৩৩টি সংগঠন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্যরা। গত ১১ আগস্ট রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে দুপুর ২টার শোতে ছবিটি দেখেন তারা। এবং পরিবেশবাদীদের অভিযোগের সত্যতা পান তারা। সেই সূত্রেই ‘হাওয়া’ গড়ায় আদালত পর্যন্ত।

‘হাওয়া’র বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাজিফা তুষি, সোহেল মণ্ডল, নাসির উদ্দিন খান, রিজভী রিজু প্রমুখ।