০৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৯:২৯:৩৮ পূর্বাহ্ন


রক্ষণভাগ সামলানো সাফজয়ীর বাড়িটা রক্ষা হবে তো?
সৈয়দ ইমরুল সামাদ, সাতক্ষীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
রক্ষণভাগ সামলানো সাফজয়ীর বাড়িটা রক্ষা হবে তো?


সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এই ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীনের বাড়ি সাতক্ষীরায়। তাদের সাফল্যে পুরো দেশ আনন্দের জোয়ারে ভাসলেও দুশ্চিন্তায় রয়েছে একই অঞ্চলের মাসুরার পরিবার। যিনি দলের রক্ষণভাগ সামলেছেন জীবন বাজি রেখে খেলার মাঠে।

সাতক্ষীরা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বেতনা নদীর তীরে বিনেরপোতা এলাকায় সেই মাসুরাদের বাড়ি। যেখানে তার মা-বাবা ও দুই বোনের বসবাস। 

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মাসুরার বাবা রজব আলী ও মা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তাদের ঘরের পেছনের দেয়ালে তিনটি ক্রস চিহ্ন দেখা যায়। কারণ, এই বাড়ি নাকি পড়েছে সড়ক বিভাগের রাস্তার ওপর! ফলে এটি দ্রুতই ভেঙে ফেলবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। 

মাসুরার বাবা বলেন, “২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে আমার মেয়ের একমাত্র গোলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। আমাদের থাকার জায়গা না থাকার বিষয়টি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর নজরে আসে। তখন তিনি আমাদের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাকে যে জমি দেওয়া হয় সেখানে ১৫ ফুট পানি জমে ছিল। বিভিন্ন দপ্তরে বহুদিন ছোটাছুটির পর সহায়তা পাইনি। বাধ্য হয়ে মাসুরার বঙ্গমাতা গোল্ড কাপের তিন লাখ টাকা দিয়ে মাটি ভরাট করি। সেই সময় মাসুরা ২৮ দিন বাড়িতে ছিল। তার ইচ্ছা ছিল দুই দিন বাড়িতে থেকে ঢাকায় যাবে। ২৬ দিনের মাথায় মেয়ের খেলার পুরস্কারের টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরি করি। এরপর মাত্র দুই দিন নতুন ঘরে থেকে ঢাকায় খেলতে চলে যায় মাসুরা।”

তিনি আরও বলেন, “আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় একটি জরাজীর্ণ ভাঙাচোরা দোচালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। চাল ও দেয়াল খসে পড়ছিলো। মাসুরা বাধ্য হয়ে তার সঞ্চিত টাকা দিয়ে এই ঘর করেছে। আগে ভ্যানে করে এলাকায় ফল-মূল বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অসুস্থতার কারণে এখন আর সেটাও করতে পারি না।”

রজব আলী বলেন, “এত টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়ে এখন আমরা প্রায় নিঃস্ব। এদিকে আমার শরীরটাও ভালো না। কাজ করতে পারি না। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। সেই হিসেবে আমাদের বাড়িতে ক্রস চিহ্ন দিয়ে গেছে। সরকারিভাবে পাওয়া আট শতক জমিতে ঘর করেছি। এটা ভেঙে দিলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবো?”

তিনি জানান, এ বিষয়ে কথা বলতে দুই বার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইউএনওর দেখা পাননি। পরে ইউএনওর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন মাসুরা। তখন ইউএনও বলেন, “সড়ক বিভাগের সীমানার মধ্যে আপনার বাড়ি পড়লে আমাদের করার কিছু নেই।”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‌“মাসুরাদের ঘরে ক্রস চিহ্ন দেওয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি।”

মাসুরার মা ফাতেমা বেগম বলেন, “মেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরবে। দেশের মানুষ আনন্দ করছে। কিন্তু আমরা তো দুশ্চিন্তায় আছি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সরকারি জায়গায় থাকায় সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করবে। আমাদের ঘরের পেছনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ঘর ভেঙে দিলে থাকবো কোথায়?”

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ‌“সরকারিভাবে জমি পাওয়ার প্রমাণপত্র নিয়ে উচ্ছেদের দিন উপস্থিত থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেবেন। ভুল করেও ক্রস দিতে পারে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।”