১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:২১:৩৮ অপরাহ্ন


পরাজয়ের ‘খোঁড়া যুক্তি’ টাইগার টিম লিডারের!
সৈয়দ ইমরুল সামাদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
পরাজয়ের ‘খোঁড়া যুক্তি’ টাইগার টিম লিডারের!


বাংলাদেশের নখদন্তহীন বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০৫ রান তুলে ফেলে। এরপর আনরিখ নর্কিয়ার সামনে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের টপ অর্ডার। আর তাতেই ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হার মানে সাকিব আল হাসানের দল। টি-টোয়েন্টিতে রানের হিসেবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার, স্বাভাবিকভাবে বিশ্বকাপেও তাই। এমন হারের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে কিছু ‘কারণ’ অথবা ‘খোঁড়া যুক্তি’ হাজির হলেন সাকিব আল হাসান।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) মাঠের পরাজয় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাকিব জানালেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণেই এমনটাই হয়েছে, ‘আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করিনি। বিশেষ করে ইনিংসের শুরুতে, প্রথম ছয় ওভারে। এরপর যেহেতু উইকেট ভালো ছিল, এই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ড আগে যা করেছে, আজ দক্ষিণ আফ্রিকাও তাই করেছে। আমাদের উইকেট নিতে হতো। এখানে উইকেট না নিতে পারলে আমরা সবসময় পিছিয়ে থাকবো। ওদের হাতে উইকেট ছিল। আর ওরা দুজন (রোসো-ডি কক) যেভাবে খেলেছে, তাতেই ম্যাচটা হাত থেকে ফসকে গেছে।’

প্রথম ওভারে কাসিগো রাবাদাকে দুই ছয় ও এক চারে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সৌম্যর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কিন্তু তৃতীয় ওভারে নর্কিয়ার প্রথম বলে সৌম্য বিদায় নিয়ে ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ১০১ রানে থামতে হয় সাকিবদের।

সাকিব বলেছেন, ‘প্রথম ওভারের পর আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। উইকেটটা ভালো ছিল। রাইলি রোসো দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে। ডি ককও ভালো খেলেছে। ওদের দুজনের জুটিটাই আমাদের হারিয়ে দিয়েছে।’

ম্যাচের আগে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাই চাপের মধ্যে আছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দেখা গেলো চাপে থাকা প্রোটিয়া দল বরং রানের ভারে চ্যাপ্টা করে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ২০৬ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়েছে ১০১ রানে। তাতে ১০৪ রানে হারের লজ্জা পেতে হয়েছে। এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণের পর অধিনায়ক সাকিব তুলনা করলেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।

প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারা অজিদের উদাহরণ টেনে সাকিব বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া এখানে বড় ব্যবধানে হেরেছে। টি-টোয়েন্টিতে এমনটা হয়। অস্বাভাবিক কিছু না। বরং খেলাটা রোমাঞ্চকর, চিত্তবিনোদনের। পাশাপাশি এরকম কঠিন ফলও আপনাকে হজম করতে জানতে হবে।’

টি-টোয়েন্টির মতো ফরম্যাটে ব্যাটারদের ভূমিকা যেখানে সবচেয়ে বেশি। সেখানে বাংলাদেশকে বার বার অসহায় আত্মসমর্পণই করতে দেখা গেছে। সাকিব অবশ্য এক্ষেত্রে নিজস্ব ফর্মূলা তুলে ধরেছেন, ‘প্রথম ১০ ওভারে যদি আমরা ভালো ব্যাট করি, উইকেট হাতে রাখি, তাহলে শেষদিকে ব্যাট করা সহজ হয়। আমি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সেটাই দেখছি। যে দলগুলো শেষ ১০ ওভারে উইকেট হাতে রাখছে, তারাই বড় রান করছে।’

এ দিন তিন ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ম্যাচ শেষে সাকিব তার বোলিং পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না খুব বেশি খারাপ বোলিং করেছি। রাইলি রুশো ছাড়া আর কোনও ব্যাটার বাউন্ডারি মারতে পারেনি। রুশো আজ যেভাবে ব্যাটিং করেছে, আমার মনে হয় না একজন বোলারকে খেলতেও তার সমস্যা হয়েছে।’

বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি ভালো ইনিংস থাকলেও এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটিং দীর্ঘদিন ধরেই ছন্নছাড়া। অনেক কিছুর পরিবর্তন করেও সাফল্য আসছে না। টপ অর্ডারে বেশ কিছুদিন ধরেই বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সেই একই হাল, একই পরণতি শেষ ম্যাচেও।

বৃহস্পতিবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারের পর সাকিব ব্যাটিংয়ের উন্নতির বিকল্প দেখছেন না। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। আমাদের বাউন্স ও পেসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমাদের শুধু ব্যাটিং করে যেতে হবে। প্রথম ১০ ওভারে যদি ভালো ব্যাটিং করি, উইকেট হাতে রাখি, তাহলে শেষের দিকে ব্যাটিং সহজ হয়। আমি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তাই দেখছি। যে দলগুলো শেষ ১০ ওভারে উইকেট হাতে রাখছে, তারাই বড় রান করছে। এই একটা জায়গায় আমরা ভালো করতে পারি।’

শুরু থেকেই তাসকিন-মিরাজদের শাসন করছেন রাইলি রোসো। চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে করেছেন উপভোগ্য ব্যাটিং। ৫২ বলে পূরণ করেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে হাঁকিয়েছেন ৭ চারের সঙ্গে ৭ ছক্কা। লিটন দাসের হাতে ধরা পড়ার আগে ৫৬ বলে খেলেন ১০৯ রানের ইনিংস। যাতে ছিল ৭ চারের সঙ্গে ৮ ছক্কার মার। তার ব্যাটিংয়েই মূলত ২০৫ রানের স্কোর গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের কোনও বোলারকেই সুযোগ দেননি এই ব্যাটার।