নেইমারের নেতৃত্বাধীন প্রিয়
দল ব্রাজিলকে সমর্থন করতে কাতার সফরে গিয়েছিলেন হোসে আর্নাল্ডো ডস সান্তোষ জুনিয়র।
কিন্তু ষষ্ঠ বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা মিশন থেকে ছিটকে গেছে ব্রাজিল। তিতের শিষ্যরা
কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার পর তিনি এখন
চির প্রতিদ্বন্দ্বি লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার সমর্থক বনে গেছেন।
সাও পাওলোতে ফিরে ৩৮ বছর
বয়সী ওই দন্তবিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একজন ফুটবল অনুরাগী হিসেবে আমি মনে করি আর্জেন্টিনাই
শিরোপার দাবীদার।’
মঙ্গলবার ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে
সেমি ফাইনালে ৩-০ গোলে জয় নিয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনালে পৌঁছানোয় তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ
করেছিলেন। এ সময় আর্জেন্টিনার হাল্কা নীল জার্সি গায়ে জড়িয়ে ‘নির্লজ্জের মতো’ ব্রাজিলের সর্ববৃহৎ নগরীর রাজপথেও ঘুরে বেড়িয়েছিলেন
তিনি।
ফ্রান্সের বিপক্ষে আলবিসেলেস্তেদের
সমর্থনের সময় তিনি একপাশে সরিয়ে রাখবেন ব্রাজিলের পেলে ও আর্জেন্টিনার দিয়াগো ম্যারাডোনার
মধ্যকার শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্ককে।
ডস সান্তোষ বলেন, ‘আর্জেন্টাইনরা এখন তাদের জাতীয় দলকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী, যারা (শিরোপা
থেকে) সামান্য দূরে রয়েছে। যে কোনও ফুটবল প্রেমিক এমন একটি দলকে সমর্থন করবে।’
বিশ্বকাপের সুচনালগ্নে
আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছিলেন, তার দল যদি টুর্নামেন্টে জয়লাভ করতে না
পারে তাহলে দক্ষিণ আমেরিকার কোন দল যেন শিরোপা লাভ করে সেটাই চাইবেন তিনি। হোক সেটি
ব্রাজিল।
চির বৈরিতা
ব্রাজিলের তথ্য বিশ্লেষণ
ইন্সটিটিউটের চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশ ব্রাজিলীয় তাদের দ্বিতীয় পছন্দের
তালিকায় রেখেছে আর্জেন্টিনাকে। তবে ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ চান না প্রতিবেশেী দলটি
শিরোপা জয় করুক।
ফুটবলের ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা
ও ব্রাজিলের সম্পর্ক জটিল। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনা
হেরে যাওয়ার পর ব্রাজিলের সোশাল মিডিয়ায় মেসিদের নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও মিমে ভরে গিয়েছিল।
কেউ কেউ গাইছিলেন বিখ্যাত ‘ডোন্ট ক্রাই ফর মি আর্জেন্টিনা’।
তবে শেষ পর্যন্ত কোয়ার্টার
ফাইনালে হেরে কেঁদেছে ব্রাজিল।
২০২১ সালে মেসি অ্যান্ড
কোং মারাকানায় ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছিল।
সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার
বিপক্ষে জয়ের পর আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের গান গাইতে দেখা গেছে। গানের কথা ছিল এমন, ব্রাজিলিয়ানরা,
কী হলো? পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা ভীতু।
এরপরও কিছু বিখ্যাত ব্রাজিল
তারকা আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছেন। সেলেকাওদের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপ জেতা কিংবদন্তী
পেলে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার জয় উদযাপন করেছেন। সাও পাওলোর হাসপাতাল থেকে মেসির অসাধারণ
পারম্যান্সেরও প্রশংসা করেছেন।
২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতা
সাবেক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রিভালদো সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, মেসি তোমার জন্য কোনও শব্দ
নেই। ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং রবিবার তার হাতে কাপ উঠবে, এটা তার প্রাপ্য।
মেসির জন্য পাগল
৩৫ বছর বয়সী মেসিকে পেলে,
ম্যারাডোনা ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে বিশ্বের সেরা একজন ফুটবলার হিসেবে মনে করা
হয়। তবে তার ক্যারিয়ারের একটিই অপূর্ণতা: বিশ্বকাপ।
ব্রাজিলের অনেকেই মেসি
অবসর নেওয়ার আগে তার হাতে বিশ্বকাপ দেখতে উদগ্রিব।
অর্থনীতিবিদ আলেক্সান্দ্রে
কালডাস বলেন, ব্রাজিলের বিদায়ের পর আমি আর্জেন্টিনার জন্য উল্লাস করছি। কারণ আমার দেখা
মতে সেরা প্লেয়ার মেসি। তিনি দারুণ খেলছেন। কাপটি পাওয়া একমাত্র তার অধিকার।
কালডাসের আট বছর বয়সী ছেলে
বার্নার্ডোও মেসির ভক্ত। কালডাস বলেন, সে মেসির জন্য পাগল। সে চায় মেসি জিতুক। এমনকি
মেসির অটোগ্রাফ চাওয়ার জন্য সে স্প্যানিশ শিখছে।
তবে দুই দেশের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীতা
একেবারে হাওয়া হয়ে যায়নি। রিভালদোর সতীর্থ রোনালদো কিন্তু মনে করছেন রবিবার ফেভারিট
হলো ফ্রান্স।
এর আগে রোনালদো বলেছিলেন,
মেসি বিশ্বকাপ জিতলে তিনি খুশি হবেন। কিন্তু তিনি এমন ভণ্ড নন যে আর্জেন্টিনার জয়ে
খুশি হবেন।
সূত্র: এএফপি