০৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৯:৩৮:৫১ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশের রক মিউজিকের কিংবদন্তি: আইয়ুব বাচ্চু
সোহেল জুলফিকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২৩-০৮-১৬ ১৯:৩৩:০৮
বাংলাদেশের রক মিউজিকের কিংবদন্তি: আইয়ুব বাচ্চু আইয়ুব বাচ্চু


  বাংলাদেশের একজন সঙ্গীত কিংবদন্তির যিনি দেশের সঙ্গীত ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। ১৯৯০ সালের ৫ই এপ্রিল এই কিংবদন্তি ব্যান্ডটি যাত্রা শুরু করে। ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু, এস এই টুটুল, জয় এবং স্বপন ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সহ-সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পুরো নাম 'লাভ রান্‌স ব্লাইন্ড'। শুরুতে ব্যান্ডটির নাম রাখা হয়েছিল 'লিটল রিভার ব্যান্ড'। পরবর্তীতে এই নামটি পরিবর্তন হয়ে 'লাভ রান্‌স ব্লাইন্ড' রাখা হয় । ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে এই ব্যান্ডটি আত্মপ্রকাশ করে একটি ডব্‌ল্‌ এলবাম দিয়ে। এলআরবি-র প্রথম এই ডবলস্-টি বের হয়েছিল 'মাধবী' এবং 'হকার' নামে। এটি বাংলাদেশ এর ইতিহাসের প্রথম ডব্‌ল্‌ এলবাম। 'চলো বদলে যাই' এলআরবি-র সবচেয়ে জনপ্রিয় গান। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে কোটিকোটি সংগীত প্রেমী মানুষের হৃদয় জায়গা করে নিয়ে ছিল এই ব্যান্ড। ব্যান্ড এর বাইরেও কিংবদন্তি আয়ুব বাচ্চুর ছিল ভিন্নমাত্রায় জনপ্রিয়তা।  

আইয়ুব বাচ্চু, স্নেহের সাথে যাকে সবাই "এ বি" বলে ডাকতেন, একজন বহু-প্রতিভাবান সংগীতশিল্পী, গায়ক এবং গীতিকার যিনি বাংলাদেশের সঙ্গীত দৃশ্যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তার শক্তিশালী কণ্ঠ, প্রাণবন্ত গান এবং মন্ত্রমুগ্ধ গিটারের দক্ষতা দিয়ে তিনি এক প্রজন্মের হৃদয় কেড়ে নিয়েছিলেন এবং জাতির রক সঙ্গীত ল্যান্ডস্কেপ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

তার সঙ্গীত জীবন যাত্রা: জন্ম (১৬ আগস্ট ১৯৬২), আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীত যাত্রা শুরু হয়েছিল অল্প বয়সে। তিনি ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন এবং দলটি তাদের রক, ব্লুজ এবং পপ প্রভাবের অনন্য মিশ্রণের মাধ্যমে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আইয়ুব বাচ্চুর এই ধারাগুলোকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ফিউজ করার ক্ষমতার ফলে একটি স্বতন্ত্র ধ্বনি তৈরি হয়েছিল যা সর্বস্তরের মানুষের কাছে অনুরণিত হয়েছিল।

বাংলা সংগীতের উপর প্রভাব: বাংলাদেশী সঙ্গীতে আইয়ুব বাচ্চুর অবদান অপরিসীম। "ফেরারি মন," "হাসতে দেখো," এবং "মাধবী" এর মতো তার কালজয়ী হিটগুলি সব বয়সের ভক্তদের দ্বারা লালিত হয়ে চলেছে। তার সামাজিকভাবে প্রাসঙ্গিক গানগুলি প্রায়শই সাধারণ মানুষের আশা, স্বপ্ন এবং সংগ্রামকে স্পর্শ করে, যা তাকে জনসাধারণের কণ্ঠস্বর করে তোলে।

তার মন্ত্রমুগ্ধকর উপস্থিতি এবং অভূতপূর্ব জাদুকর পারফরম্যান্স বাংলাদেশে লাইভ শোগুলির জন্য নতুন মান স্থাপন করে। আইয়ুব বাচ্চু তার নৈপুণ্যের প্রতি নিবেদন এবং নিখুঁততার জন্য তার নিরলস সাধনা তাকে উচ্চাকাঙ্খী সংগীতশিল্পীদের জন্য একটি রোল মডেল করে তুলেছে, অগণিত ব্যক্তিকে তাদের সংগীত স্বপ্ন অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

 ১৮ অক্টোবর ২০১৮, আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবরে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ছিল সারা দেশে। ভক্ত, সহসঙ্গী সঙ্গীতশিল্পী এবং জনসাধারণ ব্যক্তিরা তাদের শোক প্রকাশ করতে এবং সঙ্গীতশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন তার কাছে। মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, বাদ্যযন্ত্র শ্রদ্ধা, এবং হৃদয়গ্রাহী বার্তা দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেওয়া হয়েছিল।

আইয়ুব বাচ্চুর কালজয়ী সঙ্গীত এবং বাংলাদেশের সঙ্গীত শিল্পে তার প্রভাবের মাধ্যমে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের হৃদয় বেঁচে থাকবে চিরকাল। তাঁর প্রভাব এখনও সমসাময়িক শিল্পীদের গানে শোনা যায় যারা তাঁর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে চলেছেন।

আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণ বাংলাদেশের সঙ্গীত অঙ্গনের এবং সংগীত প্রেমীদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষত। তিনি একটি সমৃদ্ধ সঙ্গীতের ভান্ডার রেখে গেছেন যা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুরণিত হতে থাকবে। একজন সত্যিকারের সংগীত আইকনকে হারানোর জন্য জাতি শোক প্রকাশ করে, তার আত্মা চিরকালের জন্য অমর হয়ে থাকবে সুর এবং গানের মাধ্যমে যা লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল।