০১ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন


লিপস্টিকের ইতিহাস
সৈয়দ ইমরুল সামাদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
লিপস্টিকের ইতিহাস


১৯৩০ সালে আমেরিকান অভিনেত্রী ইভ আর্ডেন দাবি করেন, ‘যেসব নারী লিপস্টিক ব্যবহারে করেন, তার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।’ মন্তব্যটি খানিক বিব্রতকর হলেও এটাই তিনি বলেছেন। আর এই সময়ে এসে তো লিপস্টিক হয়ে গেছে দৈনন্দিন অনুষঙ্গ। শুধু কি নারীরাই ঠোঁটে মাখেন! এখন পুরুষরাও অনেকটাই নির্ভর করেন এই প্রসাধনীর ওপর!  

সুমেরীয়-মিশরীয় হয়ে রোমান সভ্যতা পর্যন্ত নারী-পুরুষ উভয়ই ঠোঁট রাঙাতে ব্যবহার করেছে জাম জাতীয় ফল, পান পাতা, মেহেদি, বিভিন্ন পোকামাকড়, গাছ-গাছড়া কিংবা বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। এরপর উচ্চবিত্ত মেসোপটেমিয়ানরা ঠোঁট রাঙাতে রত্নচূর্ণ ব্যবহার করতো। মিশরীয়রা রঞ্জক পদার্থ যেমন অ্যালজিন, আয়োডিন ও ব্রোমিনের মিশ্রণে লাল রঙ তৈরি করে লিপস্টিক ব্যবহার করতো। ফারাও রাণী ক্লিওপেট্রা গাঢ় লাল রঙ ব্যবহার করতেন ঠোঁটে।

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে লিপস্টিক নামের প্রচলন হয়েছে ১৮৮০ সালে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপস্টিক উৎপাদনে ফ্রান্সের নাম উঠে আসে। ১৮৮০ সালে প্যারিসে তৈরি হয় বাণিজ্যিক লিপস্টিক। ১৮৯০ সালের শেষদিকে ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে লিপস্টিক বিক্রি করা শুরু হয় এবং এর প্রসারে বিজ্ঞাপন প্রচারও শুরু হয়। সেসময়  লিপস্টিক কাগজের কৌটায় বা টিউবে বিক্রি করা হতো। ১৯১৫ সালে মরিস লেভি সর্বপ্রথম ধাতব কৌটার লিপস্টিক তৈরি করলেন, যা ঠেলে উপরে তোলা যায়। তারই হাত ধরে আধুনিক লিপস্টিকের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়। লিপস্টিকটি ছিল সহজে বহনযোগ্য এবং সাধারণ নারীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।

যা এখন ‘আধুনিক লিপস্টিক’ নামে পরিচিত। এটি সর্বপ্রথম উদ্ভাবন হয় ১৯২৩ সালে। এই লিপস্টিকের উদ্ভাবক জেমস ব্রুস জুনিয়র। যুগে যুগে লিপস্টিকের সঙ্গে সমাজ বাস্তবতা, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ধর্ম জড়িয়ে গেলেও লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও। তারই ধারাবাহিকতায় লিপস্টিকের রঙেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।

জেনে নেওয়া যাক কোন রঙের লিপস্টিক কী অর্থ বহন করে-

লাল

লাল লিপস্টিকের আবেদন কখনোই পুরোনো হয় না। ষোড়শ শতাব্দীতে রানী প্রথম এলিজাবেথ ছিলেন প্রসাধনীর প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট। তিনি সাধারণত ঠোঁটে লাল রঙ ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন। লাল লিপস্টিক যদি কারও প্রিয় হয়ে থাকে তবে তিনি সাহসী তো বটেই, সেই সঙ্গে তাকে খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলে মনে করা হয়।

গোলাপি

মধ্যযুগে লিপস্টিকের সঙ্গে ধর্ম জড়িয়ে যায়। খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের পর লাল লিপস্টিক পরাকে শয়তানের কাজের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হতো। প্রসাধনী নিষিদ্ধ করার জন্য তৎকালীন সময় পোপ একটি নির্দেশনা প্রচলন করেন। তবে এর ফলশ্রুতিতে লিপস্টিক পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিন্তু তখন লাল বা গাঢ় রঙের পরিবর্তে জায়গা করে নিলো গোলাপি রঙ। যা নারীদের পাপশূন্যতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণযোগ্য ছিল।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেসব নারী গোলাপি রঙের লিপস্টিক পছন্দ করেন, তারা কোমল মনের হয়ে থাকে। 

ন্যুড শেড

ন্যুড শেডের লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা বেশ কয়েক বছর ধরেই অনেক বেশি। যারা ন্যুড শেড পরতে পছন্দ করেন তারা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তারা নিজেদের সৌন্দর্য নিয়েও অত্যন্ত সচেতন।

ব্রাউন শেড

সমাজের উল্টো স্রোতে যারা হাঁটতে চান তারা নাকি ব্রাউন শেডের লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙাতে বেশি ভালবাসেন। যেকোনও বিষয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহসিকতাও বেশি থাকে তাদের। ৯০-এর দশকে পরিবেশবাদী চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটার ফলে মানুষ তাদের আশেপাশে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাওয়ার পাশাপাশি তাদের সাজগোজেও চেয়েছিল প্রকৃতির ছোঁয়া। তাই নারীরা ঝুঁকে গেলো আর্থ-টোনের লিপস্টিক অর্থাৎ ব্রাউন কালারের দিকে। সে সময় থেকেই ব্রাউন শেডের লিপস্টিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নারীদের কাছে।

পিচ শেড

পিচ শেডের লিপস্টিক ব্যবহার শুধু অফিশিয়াল কাজেকর্মে নয় বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানেও করতে দেখা যায়। পিচ কালারের লিপস্টিক ব্যবহারকারীরা সাধারণত ভদ্র এবং আশাবাদী স্বভাবের হয়ে থাকে। তারা সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে।

কমলা শেড

অরেঞ্জ বা কমলা শেডের লিপস্টিক ব্যক্তির মনের আনন্দকে প্রকাশ করে। সাধারণত যারা একটু আমুদে ও উচ্ছল স্বভাবের তারাই ঠোঁট রাঙ্গাতে কমলাকে বেছে নেন।

ইউনিক শেড

ইউনিক শেড বলতে বোঝানো হয়, যে শেডের ব্যবহার সচরাচর দেখা যায় না, তবে ব্যবহার রয়েছে। কালো, সাদা, সবুজ, বেগুনি যেকোনও রঙই হতে পারে ইউনিক শেড।

লিপস্টিক সাধারণত দুই ধরনের হয়, গ্লসি ও ম্যাট।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান