০৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:৩০:৩২ পূর্বাহ্ন


যেভাবে খেলা দেখছে কাতারের স্টেডিয়াম শ্রমিকরা
ট্রেন্ড ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
যেভাবে খেলা দেখছে কাতারের স্টেডিয়াম শ্রমিকরা


কাতারের রাজধানী দোহায় রবিবার (২০ নভেম্বর) শুরু হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। প্রিয় দলের খেলা দেখতে ইতোমধ্যেই দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে ফুটবল ভক্তরা দেশটিতে গিয়ে পৌঁছেছে। রবিবার প্রথম দিন স্বাগতিক কাতারের মুখোমুখি হয় ইকুয়েডর। এদিন খেলার উন্মাদনায় মেতে উঠে অভিবাসী কর্মীরাও। বিশ্বকাপের নানা অবকাঠামো তৈরিতে শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করেছে তাদেরও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে খেলা উপভোগ করত দেখা গেছে। 

বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া ক্রীড়ামোদিরা কাতারে যেসব হোটেলে অবস্থান করবেন কিংবা যেসব স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখবেন গত কয়েক বছর ধরে সেগুলো নির্মাণ করেছেন হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক। দোহার শিল্পাঞ্চলে স্থাপিত ফ্যান জোনে অভিবাসী কর্মীদের বিনামূল্যে বিশ্বকাপ উপভোগের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার কাতার বনাম ইকুয়েডরের উদ্বোধনী ম্যাচ দেখতে সেখানে হাজির হয় কয়েক হাজার অভিবাসী কর্মী; যাদের বেশিরভাগই বিশ্বকাপের জন্য নানা অবকাঠামো তৈরির কাজে যুক্ত ছিল। এই শ্রমিকরা মূলত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নাগরিক। এর বাইরে কিছু আফ্রিকান শ্রমিকও রয়েছে।

কাতারে নিম্ন মজুরি, শ্রমিক জীবনযাপনের মান এবং নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ক্রমাগতভাবে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। এ ইস্যুতে একহাত নিতে দেখা গেছে দোহার সমালোচকদেরও।

কাতারের ২০২০ সালের একটি সংস্কার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সমালোচকরা। তবে দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ন্যূনতম মাসিক মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগকর্তারা কোনও কর্মীকে মাসে ন্যূনতম এক হাজার কাতারি রিয়াল পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৪৫৫ টাকা।

নিজেদের শ্রম-ঘামের ফসল কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ উপভোগ করতে রবিবার তাই দোহার ফ্যান জোনে ভিড় করতে দেখা যায় অভিবাসী কর্মীদের। এদের কেউ তাদের কর্মস্থল থেকে সরাসরি সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছেন। কারও হয়তো সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল। অনেকে আবার নিয়োগকর্তাদের অনুমতি নিয়ে এসেছেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের এবারের আসরের প্রথম ম্যাচটির সাক্ষী হতে।

সেন্ট্রাল দোহা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের আলবিদা পার্কের ফ্যান জোনেও দেখা গেছে ফুটবল অনুরাগীদের উন্মাদনা। দোহার এশিয়ান টাউন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ফ্যান জোনে আল জাজিরার সঙ্গে আলাপকালে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানান বাংলাদেশের নাগরিক মুহাম্মাদ হোসাইন।

দোহায় একটি মেট্রো স্টেশনের নির্মাণকাজে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও জানান তিনি। বিশ্বকাপের জন্য কাতার সরকারের ব্যাপকভিত্তিক অবকাঠামো প্রকল্পের একটি অংশ ছিল এই মেট্রো স্টেশন।

বিশ্বকাপের মতো আয়োজনের অংশ হতে পারাকে একটি বড় ব্যাপার বলে মনে করেন মুহাম্মাদ হোসাইন। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো একটি মুসলিম দেশ এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে।


মুহাম্মাদ হোসাইনের নিজ দেশে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ক্রিকেট। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। তবে ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও ঢাকার সাফল্য পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী নন হোসাইন। তার ভাষায়, ‘আমার জীবদ্দশায় আমার দেশের কোনও সুযোগ নেই। বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন কিংবা এটি আয়োজন করার।’

এবারই প্রথমবারের মতো আরব বিশ্বের কোনও দেশে বিশ্বকাপের আয়োজন করা হলো। কোনও মুসলিম দেশেও এমন আয়োজন এটিই প্রথম। এর মধ্য দিয়ে মাত্র ২৮ লাখ জনসংখ্যার স্বাগতিক দেশ কাতার একইসঙ্গে প্রথম আরব ও মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজনের রেকর্ড তৈরি করলো। তবে এমন আয়োজন দোহার জন্য খুব সহজ ছিল না। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরটির জন্য দেশকে প্রস্তুত করতে হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া কর্মীদের বেশিরভাগই ছিল বিদেশি।

জীবিকার খোঁজে ১৫ বছরেরও বেশি সময় আগে ভারত থেকে কাতারে গিয়েছিলেন পিটার। বর্তমানে একটি অপটিক্যাল ফাইবার তৈরির কোম্পানিতে কাজ করছেন ৪৮ বছরের এই ভারতীয় নাগরিক। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, কাতারের রাস্তায় এসব বাস বা মেট্রো ছিল না; যা আপনি এখন দেখছেন। বিশ্বকাপের মতো বিশাল আয়োজন না থাকলে হয়তো এমন বহু স্থাপনা, সড়ক, মহাসড়কের অস্তিত্বই থাকতো না; যেগুলো এখন দৃশ্যমান।

তার ভাষায়, ‘আমি এটা বলতে পেরে খুশি যে, আমরা (অভিবাসী শ্রমিকরা) একটি বড় ভূমিকা পালন করেছি।’

২০ নভেম্বর খেলা শুরু হওয়ার আগেই ফ্যান জোনগুলোতে হাজির হতে শুরু করে শ্রমিকরা। খাবারের স্টলগুলোতে রান্না করা বিরিয়ানির সুগন্ধ যেন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রেফারির বাঁশির শব্দে যাবতীয় মনোযোগ গিয়ে পড়ে বিশাল স্ক্রিনে। স্বভাবতই এদিনের খেলায় কাতারকেই সমর্থন দিয়েছে অভিবাসী কর্মীরা। বিপুল করতালি দিয়ে কাতারের প্রতিটি আক্রমণ বা পাল্টা আক্রমণকে স্বাগত জানায় তারা। 

সূত্র: আল জাজিরা