০৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:৩৩:০৯ পূর্বাহ্ন


ইতিহাস কি গড়তে পারবে ক্রোয়েশিয়া বা মরক্কো?
ট্রেন্ড ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১৩ ১৬:৪০:১৪
ইতিহাস কি গড়তে পারবে ক্রোয়েশিয়া বা মরক্কো?


বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে অনেককেই অবাক করেছে ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো। তবে ক্রোয়েশিয়ার এই সাফল্যে খুব অবাক হওয়ার মতো নয়। কারণ গত বিশ্বকাপে রানার্স আপ তারা। এর আগেও সেমিফাইনাল খেলেছে লুকা মডরিচের দলটি। তবে সবাইকে অবাক করেছে মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান ও আরব দেশ হিসেবে তারা শেষ চারে পৌঁছে গেছে। এই দুই দল যদি আর একটি করে ম্যাচ জিততে পারে তাহলে পৌঁছে যাবে ফাইনালে। তখন দুটি দলের একটি ইতিহাস রচনা করবে। কারণ তারা এর আগে কখনও বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়নি।

৯২ বছরের মধ্যে ২১টি বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে। এসব টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে ৭৯টি দেশ। কিন্তু মাত্র আটটি দেশ বিশ্বকাপ জয় করেছে। আর মাত্র ১৩টি দেশ ফাইনাল খেলেছে। সর্বশেষ নতুন দেশ হিসেবে ২০১০ সালে স্পেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। এর আগে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স এবং ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় করে।

এই এলিট আট দেশ থেকে বহিরাগত দল শেষ চারে পৌঁছেছে। কিন্তু বেশিরভাগই এর চেয়ে বেশি যেতে ব্যর্থ হয়েছে।

পোল্যান্ড ও বেলজিয়াম যথাক্রমে ১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালে ইতালি ও আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল। এই বহিরাগতদের তালিকায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। তবু তারাও গত কয়েক দশক ধরে সাফল্য পাচ্ছে না। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে তারা সেমিতে উঠে অনেককে অবাক করেছিল। যদিও তারা হেরে যায় পশ্চিম জার্মানির কাচে।

১৯৯৪ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে যায়। কোনও বিশ্বকাপ ম্যাচে জয় না পাওয়া বুলগেরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত টুর্নামেন্টে সবাইকে চমকে দেয়। গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচে জয়, লাস্ট সিক্সটিনে মেক্সিকোকে পেনাল্টিতে এবং কোয়ার্টার ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে স্তব্ধ করে দেয় তারা।

অপর দিকে লাস্ট সিক্সটিনে রোমানিয়াকে টাইব্রেকারে হারানো সুইডেনও পৌঁছে যায় সেমিতে। তবে এরপরই বিশ্বকাপ স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যায়। বুলগেরিয়া ও সুইডেনের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে ফাইনালে পৌঁছে যায় ইতালি ও ব্রাজিল।

পরের বিশ্বকাপে রিস্টো স্টোইচকভের বুলগেরিয়া গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। এরপর থেকে চূড়ান্ত পর্বে আসতে পারেনি দলটি।

যুগোস্লাভিয়া ১৯৩০ ও ১৯৬২ সালে সেমিফাইনাল খেলেছে। কিন্তু দেশ ভাগ হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো স্বাধীন হিসেবে অংশ গ্রহণ করে।

টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের দারুণ জয় পেয়েছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে তারা ২-১ গোলে হেরে যায়।

২০০২ বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়নদের ক্লাবের বাইরে দুটি দেশ সেমিতে খেলেছিল। কিন্তু সাবেক চ্যাম্পিয়নদের কাছে তাদের হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল।

যৌথ স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া গ্রুপ পর্বে শীর্ষস্থান অর্জন করে আত্মবিশ্বাসী ছিল। লাস্ট সিক্সটিন রাউন্ডে ইতালিকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার পথে এগিয়ে যায় তারা। পরে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে স্পেনকে বিদায় করে প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে সেমিতে পা রাখে তারা।

কোয়ার্টার ফাইনালে সেনেগাল ও তুরস্ক মুখোমুখি হওয়ার কারণে নতুন একটি দলের সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয়েছিল। সেনেগালকে হারিয়ে সেমিতে পা রাখে তুরস্ক। কিন্তু জার্মানি ও ব্রাজিলের কাছে হেরে কোরিয়া ও তুরস্কের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। দুই দলই হারে ১-০ গোলে। এটি ছিল তুরস্কের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এরপর তারা চূড়ান্ত পর্বে আসতে পারেনি।

পর্তুগাল দ্বিতীয়বারের মতো ২০০৬ সালে সেমিতে পৌঁছেছিল। কিন্তু তারা হেরে যায় ফ্রান্সের কাছে। চার বছর পর ২০১০ সালে সেমিতে পৌঁছে ঐতিহাসিক বিস্ময়ের জন্ম দেয় স্পেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তারা ইউরো চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে যায়। ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে তাদের কাপ জয়কে কোনোভাবে অঘটন বলা যায় না।

২০১৮ সালে ক্রোয়েশিয়া অতীতের রেকর্ড ভেঙে ফেলে। সেমিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পৌঁছে যায় ফাইনালে। ফ্রান্সের কাছে হেরে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের।

এবারের বিশ্বকাপেও তারা সেমিতে, মঙ্গলবার রাতে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। কিন্তু আন্ডারডগ হিসেবে সেমিতে আফ্রিকার পতাকা নিয়ে রয়েছে আন্ডারডগ মরক্কো। এখানে পৌঁছাতে তারা ইউরোপীয় হেভিওয়েট বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালকে হারিয়েছে।

আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স, নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জিততে চায়। শেষ পর্যন্ত কি ফেভারিটদের রূপকথার অবসান ঘটবে? সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বাইরে কোনও দল পারবে কাপ জিততে? বিশ্ব কি পাবে নবম বিশ্বকাপ জয়ী দেশ? মঙ্গল ও বুধবার ফুটবল ভক্তরা পেয়ে যাবে এই উত্তর।