চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে তার কাঁধে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া, সেটি পূরণ করতে পারেননি তিনি। অধিনায়কত্ব তো বটেই নিজের ফর্মটাকে হারিয়ে ফেলেছেন। লম্বা সময় ধরেই তিন ফরম্যাটে শান্ত রান খরায় ভুগছেন। যান নিয়ে তীব্র সমালোচনাও হচ্ছে। হয়তো সমালোচনা শান্তর কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই অবস্থায় নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে চাইছেন তিনি। বাংলাদেশের বর্তমান অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে তার জায়গায় আসার জোর সম্ভাবনা আছে মেহেদী হাসান মিরাজের।
আগামী ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে শেষ টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। এই টেস্টের মধ্য দিয়ে শান্ত নেতৃত্বের ইতি টানতে চান। ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এমনই দাবি করেছে।
সবশেষ কয়েক সিরিজে ধারাবাহিকতার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটার। রানখরায় ভুগতে থাকায় অধিনায়ক শান্তকে নিয়ে সমালোচনাটা হচ্ছে প্রবলভাবে। সেটা হয়তো তার চোখ এড়িয়ে যায়নি। নেতৃত্বের চাপ যে ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলছে সেটা অনুমান করতে পারছেন।
যদিও বিসিবি শান্তকে আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ঠিক করলেও সেই দায়িত্ব আর সামলাতে চান না তিনি। ক্রিকবাজের তথ্য মতে, নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই বোর্ডকে জানিয়েছেন। তবে বোর্ডপ্রধান ফারুক আহমেদ বর্তমানে বিদেশে থাকায় সেই সিদ্ধান্ত এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এ ব্যাপারে বিসিবির এক পরিচালক বলেছেন, ‘হ্যাঁ, তিনি (শান্ত) আমাদের জানিয়েছেন যে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পরে দলের নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে চান না।’
এ প্রসঙ্গে শান্ত বলেছেন, ‘দেখা যাক কী হয়। কারণ আমি এখনও সভাপতির (বিসিবি) কাছ থেকে এ বিষয়ে শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।’
নেতৃত্বে খুব একটা সফল নন শান্ত। ৯ টেস্টে তিনটিতে জিতেছেন তিনি। এর বাইরে ৯টি ওয়ানডের ৬টিতে হেরেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ২৪টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে শান্তর জয়ের সংখ্যা ১০টি। এই অবস্থায় শান্তকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল। যদিও বিসিবি চাচ্ছে না এখনই নেতৃত্বে বদল আনতে। ক্রিকেবাজের রিপোর্ট অনুযায়ী, শান্তকে তার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করছে বিসিবি। তবে বিষয়টি সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর শান্ত টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নেতৃত্বে রাখা হয়।
এদিকে শান্তকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া দলের জন্য মোটেও ঠিক হবে না। শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘শান্তকে পরিবর্তন তো করাই যায়। কিন্তু পরিবর্তনের আগে ভাবতে হবে, পরে যে আসবে তার সঙ্গেও আমরা এমন করবো কিনা। তার সঙ্গেও যদি আমরা এমন করি, তাহলে তো দুই দিন পর ক্যাপ্টেন খুঁজে পাবেন না। কোনও দলের ক্ষতি করতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই দলের অধিনায়কের পেছনে লাগা। ক্যাপ্টেন অস্থির হলে দলের স্থির থেকে পারফর্ম করা কঠিন। একজন অধিনায়ককে আমরা বিবেচনা করব দুই বছর পর।’
শেষ অব্দি শান্তকে সরিয়ে দেওয়া হলে বা শান্ত নিজেই সরে দাঁড়ালে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে খুব ভালো বিকল্প নেই। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে তারা মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়েই ভাবছেন। সেটি হলে টেস্ট ও ওয়ানডের জন্য মিরাজকে নেতৃত্ব নিতে হবে। সেই পথেই বোধ হয় হাটতে চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।