০১ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:৩৮:৫০ অপরাহ্ন


৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে নেইমারের!
সালেহ খান শাওন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০২২-১২-১১ ০১:১৩:০৪
৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে নেইমারের!


২০১৩ সালে সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন নেইমার। এরপর থেকে এই ব্রাজিলিয়ানের সেই দলবদল নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। সেই দলবদলের সূত্রে এবার আদালতে আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নেইমারকে।

সান্তোস থেকে বার্সায় পাড়ি জমানো নিয়ে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে ব্রাজিলের বিনিয়োগ সংস্থা ডিআইএসের করা মামলায় আগামী সপ্তাহে আদালতে নেইমারকে হাজিরা দিতে হবে। এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে পাঁচ বছর কারাবাসের শাস্তি পেতে হতে পারে তাকে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নেইমার ছাড়াও এই মামলায় বিবাদী পক্ষে আছেন তার বাবা-মা, বার্সেলোনার সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট সান্দ্রো রোসেল আর জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ এবং সান্তোসের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওডিলিও রদ্রিগেস। সোমবার (১৭ অক্টোবর) থেকে মামলার কার্যক্রম শুরু হবে বার্সেলোনায়।

মামলায় বলা হয়, সান্তোসে থাকাকালে নেইমারের ৪০% স্বত্বের মালিকানা ছিল ডিআইএসের কাছে। সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় যোগদানের সময়ে নেইমারের প্রকৃত দলবদল ফি প্রকাশ করা হয়নি।

নেইমার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে ২০১৭ সালেই স্পেনের উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন। তবে ৩০ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সেই আপিলে হেরে যান। ফলে বিচার কার্যক্রমের পথ আরও প্রশস্ত হয়েছে।

বার্সেলোনার হয়ে ২০১৫ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন নেইমার/টুইটার

ডিআইএসের করা মামলায় নেইমার ও তাঁর পরিবারের পক্ষে লড়তে যাওয়া আইনজীবী বেকার ম্যাকেঞ্জি জানান, দলবদলের কাজটি ব্রাজিলিয়ান নাগরিকদের মাধ্যমে করা হয়েছে। তাই নেইমারের পরিবারের বিচার করার আইনি এখতিয়ার স্প্যানিশ আদালতের কাছে নেই বলে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হবে।

মামলার বাদী অর্থাৎ স্প্যানিশ প্রসিকিউটররা নেইমারের শাস্তি হিসেবে দুই বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) ইউরো জরিমানা দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে নেইমারের দলবদলের সময়কালে বার্সেলোনার প্রেসিডেন্টের পদে থাকা সান্দ্রো রোসেলের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

এছাড়া, বার্সেলোনাকে ৮৪ লাখ ইউরো জরিমানা এবং স্প্যানিশ ক্লাবটির আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর কারবাসেরও দাবিও তোলা হয়েছে। ডিআইএস সর্বমোট ১৪ কোটি ৯০ লাখ ইউরো জরিমানা এবং রোসেল-বার্তামেউর কারাদণ্ডেরও দাবি করেছে সংস্থাটি।

বার্সেলোনার সাবেক প্রেসিডেন্ট সান্দ্রো রোসেল এর আগেও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তার প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তাছাড়া, বার্সেলোনা এবং বার্তোমেউর আইনজীবীরাও মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। সান্তোসের পক্ষ থেকেও এ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য আসেনি।

নেইমারের বয়স যখন ১৭ বছর, তখন দুই মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তার ৪০% স্বত্বের মালিকানা পায় ডিআইএস। তাদের দাবি, দলবদলের বাজারে নেইমারের যে মূল্য ছিল, সেটির চেয়েও কম দামে তাকে বার্সেলোনার কাছে ছাড়া হয়েছিল।

নেইমারের দলবদলের বিষয়ে বার্সেলোনার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সান্তোস থেকে ব্রাজিলীয় উইঙ্গারকে দলে টানতে ৫ কোটি ৭১ লাখ ইউরো খরচ হয়েছিল, তার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছিল নেইমারের পরিবার। সান্তোসকে যে বাকি ১ কোটি ৭১ লাখ ইউরো দেওয়া হয়েছিল, সেটির ৪০% অর্থ পায় ডিআইএস।

বৃহস্পতিবার বার্সেলোনায় এক সংবাদ সম্মেলনে ডিআইএসের পক্ষের আইনজীবী পাওলো নাসের বলেন, দলবদলের বাজারে নেইমারের সর্বোচ্চ দাম দিতে রাজি থাকা ক্লাবের কাছে তাকে বিক্রি করা হয়নি। ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়েও অনেকে নেইমারকে দলে টানতে ইচ্ছুক ছিল।

পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে নেইমারের আইনজীবীদের দাবি, ফুটবলের দলবদলের বাজার তো নিলামের আসর না। ফুটবলের দলবদলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাম হাঁকানো ক্লাবের কাছেই খেলোয়াড় বিক্রির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

বেকার ম্যাকেঞ্জির একজন মুখপাত্র জানান, খেলোয়াড় কোনো সেবা বা পণ্যবস্তু না। তাই এক ক্লাব থেকে অন্য ক্লাবে পাড়ি জমানোর বিষয়টি খেলোয়াড়ের স্বাধীন ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।

সোমবার বার্সেলোনার আদালতের প্রথম দিনের কার্যক্রমে নেইমারকে উপস্থিত থাকতে হবে। তবে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত মামলার শুনানি চলাকালেও তাকে হাজির হতে হবে কি-না, সেটি এখনও অনিশ্চিত। নেইমার, তার বাবা-মা, রোসেল এবং বার্তোমেউ আগামী শুক্রবার তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করবেন।