টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের সুপরিচিত অভিনয়শিল্পী ৭৩ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এডমিট তার পরিবার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল ১১টায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা তার শেষ নিঃশ্বাস তেগ করেন বলে জানান খালেকুজ্জামানের ছেলে জিসান।
জিসান বলেন, ‘বাবা কী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, আমরা কিছুই জানতে পারিনি। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’ এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন জিসান। প্রথমে খালেকুজ্জামানের মরদেহ হাসপাতাল থেকে তার নিকেতনের বাসায় নেওয়া হয়, পরে বিকেল চারটায় নিকেতন মসজিদে তার নামাজে জানাজা আদায় করা হয়। এরপর তাকে নরসিংদীর গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার কথা।
এই গুণী শিল্পীর জন্ম ১৯৫০ সালে। ব্রিটিশ রেলওয়ের মেডিকেল অফিসার ছিলেন তাঁর বাবা শামসুজ্জামান এবং মা শায়েস্তা আক্তার জামান ছিলেন গৃহিণী। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্য ও চারুকলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি তাঁর সহধর্মিণী কণ্ঠশিল্পী সুলতানা মমতাজ। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০ নাটকে অভিনয় করেছেন এই গুণী শিল্পী। বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হন তিনি ১৯৭৫ সালে। বিটিভিতে অভিনয় শুরু করেন নওয়াজেশ আলী খানের প্রযোজনায় ‘সর্পভ্রমে রজ্জু’ নাটক দিয়ে। এরপর ‘তমা’, ‘বড় বাড়ি’, ‘সময় অসময়’, ‘সুবর্ণ সময়’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি।
‘বড় ছেলে’, ‘বৃহন্নলা’, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ ও ‘দেবী’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি আলোচিত নাটক-সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। টিভি নাটকের পাশাপাশি মঞ্চনাটকেও তার উপস্তিথি ছিল লক্ষণীয়। অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রেও আছে তার নাম। অভিনয় করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক ও কবরীর সঙ্গে কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘অনির্বাণ’ সিনেমায়।
প্রবীণ এই অভিনেতা নাট্যাঙ্গনে সহকর্মীদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেকে ফেসবুকে ছবি দিয়ে শোক প্রকাশ করছেন। অভিনেত্রী তানভীন সুইটি লিখেছেন, ‘তিনি অনেক ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। সব সময় হাসি থাকত তাঁর মুখে, এত ভালো ব্যবহার ছিল তাঁর...।’
নির্মাতা সানী সানোয়ার তার ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘ওনার সাথে একটা কাজ (মিশন এক্সট্রিম-১) করার সুযোগ দিয়েছিলেন। অসম্ভব ভালো একজন মানুষ এবং অভিনেতা। খুব খারাপ লাগছে শুনে যে উনি নেই।’ তার সাথে কাজ করা প্রায় প্রত্যেকেই তাকে উল্লেখ করে স্টেটাস দিয়েছেন। শিল্প অঙ্গনে নিপাট ভদ্রলোক ও ভালো শিল্পী হিসেবে পরিচিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার ভক্ত শ্রোতারাও।
